ছাত্রদল নেতা রাজু হত্যা মামলায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল।

প্রকাশিত:বুধবার, ২৯ মে ২০১৯ ০৩:০৫

ছাত্রদল নেতা রাজু হত্যা মামলায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল।

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক ফয়জুল হক রাজু হত্যা মামলায় আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এতে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রকিব এবং যুবদলের ওপর নেতা মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ভুঁইয়াসহ ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলা থেকে শাহিন আহমদ ও কায়েছ আহমদ নামে দুজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক অনুপ চৌধুরী এ সুপারিশ করেন। গত ২৮ মে তিনি আদালতে এ অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন। মামলার বাদী দবির আলী গত মঙ্গলবার (২৮ মে) অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত রাজু মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শাহাপুরের মো. ফজর আলীর ছেলে। তিনি সিলেট ল’কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। নিহত রাজুর চাচা দবির আলী বলেন,‘আমার ভাতিজাকে যারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।’ মামলার আসামিরা হলেন, আব্দুর রকিব চৌধুরী (৩৭), দেলোয়ার হোসেন দিনার (২৯), মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত ভুঁইয়া (৩৪), একরামুল হক (২২), মোস্তাফিজুর রহমান (৩১), শেখ নয়ন মিয়া (৩০), সৈয়দ আমিরুল হক সলিড (৩৭), ফরহাদ আহমদ (২৮), সাদ্দাম হোসেন (৩১), মুহিবুর রহমান খান রাসেল (৩৪), রাসেল আহমদ উরফে রাসেল উরফে কালা রাসেল- উরফে কানা রাসেল (৩৪) আরাফাত এলাহী প্রকাশ বাবু (৩৩), মোফাজ্জল চৌধুরী মুর্শেদ (২৬), আলফু মিয়া (২৪), শহীদুল হক সুফিয়ান (৩০), নজরুল ওরফে জুনিয়র নজরুল (২৫), ফাহিম আহমদ তোহা (২৮), আফজল প্রকাশ আবজল আহমদ চৌধুরী (৩০), সাহেদ আহমদ চৌধুরী (২৫), রুবেল মিয়া (২৪), মামুন আহমদ (২৫), জুমেল আহমদ চৌধুরী (২৯), মুহিত ওরফে মুহিব (৩০), মুর্শেদ আলম প্রকাশ রাসেল আহমদ (৩০), জাবেদ আহমদ প্রকাশ ছেচড়া জাবেদ (৩০) ও জামাল মিয়া প্রকাশ জালাল (২৩)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদল ক্যাডার আব্দুর রকিব চৌধুরীর নির্দেশে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাজুর শরীরে ৪০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডে ২৬ জন অংশ নিয়েছে। অভিযোগপত্রে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযুক্তরা আগে থেকেই রাজুকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ফয়জুল হক রাজু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আদালতে ৬ জন জবানবন্দী দিয়েছেন। এর মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ফাহিম আহমেদ তোহা ও সাদ্দাম হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট (১ম আদালত) মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। দুজনের জাবানবন্দীতে রকিব ও দিনারসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। জবানবন্দীতে রকিবের নির্দেশেই তারা এ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে সাদ্দাম। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন জাকির হোসেন উজ্জ্বল, সালাউদ্দিন লিটন, মঈনুল করিম ও নজরুল ইসলাম। বিচারক এই চার সাক্ষীর জবানবন্দীও রেকর্ড করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক অনুপ কুমার চৌধুরী বলেন,‘হত্যা মামলা হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ। রকিব, দিনার ও ইয়সিন আরাফাতসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট রাতে রাজু তার মোটরসাইকেলে করে জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও সালাউদ্দিন লিটনকে নিয়ে মেয়র আরিফের বিজয় মিছিল শেষে বাসার যচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় কুমারপাড়ার মেইন রোডে রাইয়ান ফার্মেসির সামনে পৌঁছামাত্র কতিপয় সন্ত্রাসী রাজুর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। পরে তারা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলিতে জাকির হোসেন উজ্জলের আহত হয়। এসময় মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে গেলে তারা রাজুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা রাজুকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাজুর চাচা দবির আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যদিও সিলেট বিএনপির তরফ থেকে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে ছাত্রদল কর্মী রাজু’র আসল হত্যাকারীদের আড়াল করে মামলাটিতে খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মামলার মোড় ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে প্রশাসন।