উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে বৈষম্য কমানো জরুরি, স্মারক বক্তৃতায় এম এম আকাশ

প্রকাশিত:শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪ ১০:০৫

উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে বৈষম্য কমানো জরুরি, স্মারক বক্তৃতায় এম এম আকাশ

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এখান থেকে উচ্চ আয়ের দেশ হতে গেলে বৈষম্য কমানো দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের সীমা অনেক বেশি। সে জন্য নিম্নমধ্যম, মধ্যম বা উচ্চমধ্যম—এসব শ্রেণি নিয়ে আলোচনা না করে মূল যে বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত সেটা হলো, বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশ হতে পারবে কি না, সেদিকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) অনুষ্ঠিত অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রয়াত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ স্মৃতি সংসদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল। এতে আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

এম এম আকাশ বলেন, যেসব দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, সেই সব দেশের সবাই যে উচ্চ আয়ের দেশ হতে পেরেছে, তা নয়। তাই তিনি মনে করেন, উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে উচ্চ সঞ্চয়, বিনিয়োগ, দক্ষ মানবশক্তি, সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান ও বাজারের প্রতিযোগিতা লাগবে।

অর্থনীতিবিদ নজরুল ইসলামের বইয়ের সূত্র ধরে এম এম আকাশ আরও বলেন, পুঁজি ব্যবহারের দক্ষতা দরকার। এ ছাড়া উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে মধ্যম আয়ের ফাঁদেও আটকে যেতে হবে। সেই সঙ্গে আয় অসমতা থাকলে এবং সমতা ও ন্যায্যতার অভাব থাকলে সামগ্রিকভাবে মানুষের জীনমানের উন্নতি হবে না; তখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে যেতে হবে।

অসমতা প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, বৈষম্য বাড়ছে সত্য কিন্তু দেখতে হবে, সমাজের মানুষ বৈষম্যের বিষয়ে কতটা অসহিষ্ণু হচ্ছে। চীনের মতো দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে গিনি সহগ দশমিক ৫০-এর ঘরে, যদিও একজন চীনা অর্থনীতিবিদ হিসাব করে দেখিয়েছেন, চীনে গিনি সহগ দশমিক ৬১। এত অসমতা নিয়েও চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি; মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ নয়, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ধরে ফেলছে। আবার এটাও ঠিক, বিগত কয়েক বছরে চীনের প্রবৃদ্ধির গতি খানিকটা কমেছে।

বিনায়ক সেন আরও বলেন, অসমতা দূর হলেই যে উন্নয়নের পালে হাওয়া লাগবে, সেটা ঠিক প্রমাণিত নয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে আত্মোন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনকি সে জন্য যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে, সেটিও মনে করেন না তিনি। বিনায়ক সেন বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। মানবসম্পদের উন্নয়ন বলতে সবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নয়, বরং শক্তিশালী মৌলিক শিক্ষা থাকলেই তা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার। মোজাফ্‌ফর আহমদের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ যে অবস্থায় আছে, তিনি বেঁচে থাকলে খুবই দুঃখিত হতেন। এই বাংলাদেশ নিয়ে খুব একটা আশান্বিত হতেন না তিনি।

বিশ্বের অনেক কর্তৃত্ববাদী দেশ সুশাসনে গুরুত্ব দিয়েছে বলে উল্লেখে করেন বদিউল আলম মজুমদার। চীনের মতো দেশে মেধায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, আজকের বাংলাদেশে মোসাহেবি হলো একমাত্র যোগ্যতা। যে বা যারা মোসাহেবি করতে পারে, তারাই এগিয়ে যায়।

এ ছাড়া চীনে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী; কিন্তু বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ করেন বদিউল আলম মজুমদার। অর্থাৎ কর্তৃত্ববাদী দেশেও ক্ষমতার এক ধরনের ভারসাম্য আছে; বাংলাদেশে এই ভারসাম্য এখন নেই। দেশের প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। দেশে এখন নিয়মনীতির বাইরে অনেক কিছু হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মোজাফ্‌ফর আহমদের স্ত্রী রওশন জাহান উপস্থিত ছিলেন। মোজাফ্‌ফর আহমদকে এভাবে স্মরণ করায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এর আগে অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ স্মারক বক্তৃতা দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সৈয়দ আবুল মকসুদ, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রমুখ।

সব শেষে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ স্মৃতি সংসদের সদস্যসচিব বিধান চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে হয়তো খুব বেশি মানুষ উপস্থিত নেই; কিন্তু যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই সমাজের সচেতন মানুষ।