বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-৪: পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ কেন

প্রকাশিত:বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪ ১১:০৬

বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-৪: পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ কেন

নিউজ ডেস্ক: ৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখন প্রতিদিন ৯০ জন করে প্রার্থীর ভাইভা হচ্ছে। ৯ জুলাই থেকে প্রতিদিন ১৮০ জন প্রার্থীর ভাইভা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ চতুর্থ পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে বন ক্যাডারে সহকারী বন সংরক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত পিংকি রানী মজুমদার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পিংকি রানী মজুমদারের ৪১তম বিসিএসে প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, দ্বিতীয় প্রশাসন ক্যাডার, তৃতীয় পুলিশ ক্যাডার, চতুর্থ শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার এবং পঞ্চম বন ক্যাডার। যেহেতু তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, তাই ভাইভায় তাঁকে সব প্রশ্ন ইংরেজিতে করা হয়। আনুমানিক ২৫ মিনিটের মতো ভাইভা হয়। ২০টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯টির উত্তর দিতে পারেন।

পিংকি রানী মজুমদার বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে মনে হয়েছিল আমার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করব। সৃষ্টিকর্তা যদি ভাগ্যে লিখে রাখেন ক্যাডার পদ পাব, না হলে পাব না। ৪১তম বিসিএসের ভাইভা দেওয়ার সময় মৎস্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, চাঁদপুরে ইনস্ট্রাক্টর (নন-ক্যাডার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন পিংকি রানী। কোথায় কর্মরত আছেন, সেটি ভাইভার শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল।

ইরাক যুদ্ধকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত (রিলেট) করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে পিংকি রানী মজুমদার বলেন, ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এটি রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে একটি প্রক্সি যুদ্ধ। ইরাক যুদ্ধ শেষ হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট এখনো শেষ হয়নি। রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে ইউক্রেন বাফার স্টেটের মতো কাজ করছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে পিংকি রানী উত্তর দেন, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা সফল হয়নি। সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় শিগগিরই প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। কিছুদিন আগে মিয়ানমারের প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন। রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে তাদের আশ্রয়ের জন্য মিয়ানমার সরকারের তৈরি মডেল গ্রামও পরিদর্শন করেছে। কিন্তু মডেল গ্রাম প্রকল্পটি রোহিঙ্গারা পছন্দ করেনি।
মিয়ানমারের উদ্যোগে বিশ্বাস করেন কি না, এমন প্রশ্নে পিংকি রানী বলেন, আমি মনে করি মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নাটক করছে। কারণ, আন্তর্জাতিক আদালতে দেশটিকে রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ জন্য দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নাটক করছে।


মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জাপানি নাগরিকদের কী পুরস্কার ও কতজনকে দেওয়া হয়েছিল? এ দুটি প্রশ্নের উত্তরে পিংকি রানী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় জাপানের চার নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ সম্মাননা দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি কী? এ বিষয়েও জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। পিংকি রানী উত্তর দেন, পররাষ্ট্রনীতি হলো একটি দেশ কীভাবে জাতীয় স্বার্থ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করবে, সে বিষয়ে লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ করা। আর কূটনীতি হলো বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যম।

পারসোনা নন-গ্রাটা বলতে কী বোঝায়, এমন প্রশ্নের জবাবে পিংকি রানী বলেন, পারসোনা নন-গ্রাটা মানে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অন্য কোনো দেশে গ্রহণযোগ্য নন। ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১ অনুযায়ী, কোনো দেশ কোনো কারণ ছাড়াই কোনো কূটনীতিককে সে দেশে পারসোনা নন-গ্রাটা হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।

পানামা খালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কেমন? এ প্রশ্নে পিংকি রানী উত্তর দেন, পানামা খালের প্রধান অর্থনৈতিক গুরুত্ব হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ খাল সময় ও খরচ কমায়। এটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে মিলিত হয়েছে।

আমরা যদি আপনাকে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ করি, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কীভাবে কাজ করবেন, এমন কৌশলী প্রশ্নে পিংকি রানী বলেন, সৌদি আরবে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করব। আমি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও কাজ করব।

কূটনীতিক হিসেবে বিদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম অগ্রাধিকার কী হবে? জবাবে পিংকি রানী বলেন, গত সাত বছরে ২৯৭ জন প্রবাসী নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাই আমি নারী প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে চাই; যাতে তাঁরা বিদেশে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার না হন।

পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে পিংকি রানী মজুমদার বলেন, ‘এটির পেছনে একটা ছোটগল্প আছে। আমার বাবা প্রায় ২৫ বছর কুয়েতে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সময় তিনি চাকরি, বেতন ও পাসপোর্ট–সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। আমার বাবাকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কয়েকবার সাহায্য করেছিল। বাবা প্রায়ই আমাকে দূতাবাসের সহযোগিতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে বলতেন। এসব কারণে ফরেন সার্ভিস সম্পর্কে আমার বেশি আগ্রহ। এ ছাড়া আমি প্রবাসী কর্মীদের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চাই। তাই পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম পছন্দ।’