প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে শেষ বয়সে স্বপ্নপূরণ দুই বোনের

প্রকাশিত:সোমবার, ১০ জুন ২০২৪ ০২:০৬

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে শেষ বয়সে স্বপ্নপূরণ দুই বোনের

নিউজ ডেস্ক: শুধু আমেনা-ছামিনাই নয়, লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি উপজেলার সবদল গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাকাঘর এবং জমি পেয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়েছে মোট ৬৫টি পরিবার। যারা প্রত্যেকেই এখন নিজ উদ্যোগে দোকান, গ্যারেজ, কৃষিকাজ, মৌসুমি ফল-ফলাদি এবং শাকসবজি উৎপাদনসহ নানান কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। সন্তান-সন্ততিদেরও নিয়মিত পাঠাচ্ছেন স্কুল-কলেজে।

সোমবার (১০ জুন) এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে পাওয়া এ ঘরের সামনেই অনেকে আম, ডালিম, পেঁপে, মরিচ, পুঁইশাকসহ নানান সবজির চাষ করেছেন। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পটিই সবুজে ঘেরা। বিভিন্ন পিছুটান এবং প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সবাই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বৃদ্ধা ছামিনা খাতুন বলেন, জীবনে কোনোদিন চিন্তা করিনি আমি নিজের ঘর কিংবা জমিতে থাকব। রোদ-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট করেছি। আমরা দুই বোন। স্বামী-সন্তান কেউ বেঁচে নেই। মানুষের কাছে চেয়ে খাবার খেতাম। কখনো রেলস্টেশন, কখনো সড়কে আবার কখনো মানুষের বারান্দায় থাকতে হয়েছে। মানুষ নানান কটু কথা বলতো। খুব কষ্ট লাগতো। এখন শেষ বয়সে সরকারের সহযোগিতায় দুই বোন ২ শতাংশ জমিতে পাকা ঘর পেয়েছি। আমাদের সবার জীবনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা আলেমা খাতুন। তিনি ঘরের পেছনের পতিত জমিতে দিয়েছেন টং দোকান। ঘরের সামনে করেছেন মরিচের বাগান। স্বামী-হারা এই নারীও দীর্ঘদিন আশ্রয়হীন এবং গৃহহীন হিসেবে মানুষের জমিতে ঘর বেঁধে থেকেছেন। সেখানে তাকে সহ্য করতে হয়েছে নানান লাঞ্ছনা। সবশেষ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর আর জমিতে নিজের ঠিকানা পেয়েছেন। এখন নিজেই দোকান দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।

আলেমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। আমার একটিমাত্র মেয়ে সন্তান। তাকে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন কাটিয়েছি। মানুষের জমিতে ঘর বেঁধে থাকতাম। সেখান থেকে ঘর ভেঙে তাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে ঢাকায় গিয়ে বস্তিতে থেকেছি। সবশেষ মেম্বারের মাধ্যমে এখানে ঘর এবং জমি পেয়েছি। এখন একটি দোকান দিয়েছি। সেখানে যে বেচা-কেনা হয় তার মাধ্যমেই খাবার খরচ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক পাশেই চায়ের দোকান করেছেন আরেক উপকারভোগী বাহার আলী। তিনিও এর আগে রিকশা চালাতেন। ছিল না নিজের কোনো জমি কিংবা ঘর। তারও জীবনের পরিবর্তন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারে।

বাহার আলী বলেন, দিনে ১০০-১২০ কাপ চা বিক্রি হয়। এই ঘর প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। ঘরের সঙ্গেই ছোট টং দোকান দিয়েছি। তাতেই সংসার চলছে।

বাহার আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, এখন দোকান থেকে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। এই টাকায় সংসার চলে। সঙ্গে ছেলের পড়াশোনার খরচও দিতে পারছি।

স্থানীয় আদিতমারি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কুটিরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবাই এখন স্বাবলম্বী। তারা নিজেরাই নিজেদের সংসার চালানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করেছেন। জমি ঘর সব মিলিয়ে ৭ লাখ টাকার উপকরণ তাদের দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে সবধরনের নাগরিক সুবিধাও পূরণ করতে চেষ্টা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তারা সবাই আশ্রয়হীন হিসেবে ছন্নছাড়া জীবনযাপন করতেন। তারা যখন নিজের ঘর জমি পেয়েছেন তার থেকে ভালো অনুভূতি আমরা কেউ দেখিনি। অনেকে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কেঁদেও দিয়েছেন। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৪২টি ঘর উপহার দেবেন। এরফলে এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত মোট ঘরসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮২টি। আর এই উপজেলায় কেউ ভূমিহীন কিংবা আশ্রয়হীন থাকবে না।

অপরদিকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ৫ম পর্যায়ের ২য় ধাপে মঙ্গলবার (১১ জুন) সারাদেশে ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সহকারী প্রেস সচিব এ.বি.এম সরওয়ার-ই-আলম।

তিনি বলেন, গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কার্যক্রমের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ৩টি উপজেলার (লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও এবং ভোলা জেলার চর ফ্যাশন) সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিসহ ১৮ হাজার ৫৬৬টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত অশ্রয়ণ প্রকল্প এবং অন্যান্য কার্যক্রম দ্বারা গৃহ প্রদানের মাধ্যমে ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছেন। আর শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন মানুষ।

এছাড়া এ পর্যায়ে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার সব উপজেলাসহ মোট ৭০টি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।