চুয়েটে কথায় ও খেলায় হলকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার লড়াই

প্রকাশিত:বুধবার, ১২ জুন ২০২৪ ১১:০৬

চুয়েটে কথায় ও খেলায় হলকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার লড়াই

নিউজ ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোকে শিক্ষার্থীরা বলে থাকেন দ্বিতীয় বাড়ি। কেনই–বা বলবেন না? এই হলে থেকেই শিক্ষার্থীরা অতিবাহিত করেন জীবনের চার থেকে পাঁচটি বছর। তৈরি করেন মিষ্টি-মধুর অনেক স্মৃতি, জন্ম দেন অমলিন কিছু মুহূর্তের। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী হয়ে থাকে এই হল। তাই তো এই হলকে ঘিরেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে ওঠে আবেগ, জন্ম নেয় এক অন্য রকম ভালোবাসা। চায়ের আড্ডা, খেলার মাঠ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় চলে নিজের হলকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার লড়াই। গতকাল রোববার এমন লড়াইয়ের দেখা মেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এ দিন আন্তহল ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় মুখোমুখি হয় শেখ রাসেল হল ও বঙ্গবন্ধু হল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা শাখার আয়োজনে গত ৩০ মে শুরু হয় এ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছাত্রদের পাঁচটি আবাসিক হলের প্রতিনিধিদল।

খেলায় মোট ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দুই দল মুখোমুখি হয় চূড়ান্ত খেলায়।

প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করে এক অন্য রকম উন্মাদনা। কথার লড়াই হোক কিংবা খেলার মাঠের লড়াই, নিজের হলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণেই ব্যস্ত ছিলেন প্রতিটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। চূড়ান্ত খেলাকে ঘিরে এদিন খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকেই নিজ নিজ হলের পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে বাঁশি ও ঢোল বাজিয়ে মাঠে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখর হয়ে থাকে খেলার মাঠের চারপাশ। সাজসজ্জা, রঙিন পতাকা, জার্সি পরা খেলোয়াড়দের আনাগোনা ও দর্শক-সমর্থকদের উৎসাহে মাঠজুড়ে জমজমাট ফুটবল প্রতিযোগিতার আবহ বিরাজ করে। বিকেল পাঁচটায় রেফারির বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় দুই দলের মাঠের লড়াই। সেই সঙ্গে মাঠের দুই পাশে থাকা দর্শক-সমর্থকদের মধ্যেও শুরু হয় কথার লড়াই। খেলার ২৫ মিনিটের মাথায় শেখ রাসেল হল দলের পক্ষে গোল করেন ওমর আবির। সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ফেটে পড়েন শেখ রাসেল হলের দর্শক-সমর্থকেরা। সবাই একসঙ্গে ‘গোওওওওল’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। কেউ কেউ দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন গোলদাতাকে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে শেখ রাসেল হল।

খেলা শেষে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম। খেলায় একমাত্র গোল করে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন শেখ রাসেল হলের খেলোয়াড় ওমর আবির। টুর্নামেন্ট সেরা হন শেখ রাসেল হলের খেলোয়াড় মেফতাহুজ্জামান আকাশ এবং যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন শেখ রাসেল হলের খেলোয়াড় ওমর আবির ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের খেলোয়াড় নাহিদুল হাসান হাসিব।

পরে ট্রফি হাতে নিয়ে বাঁশি-ঢোল বাজিয়ে, স্লোগানের তালে তালে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন শেখ রাসেল হলের খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা। বিজয়ী দলের অধিনায়ক ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালে প্রথম বর্ষে থাকাকালে এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় বঙ্গবন্ধু হলের কাছে আমরা হেরেছিলাম। এবার পাঁচ বছর পর তাদের হারিয়েই আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। নিজ হলের প্রতিনিধিত্ব করে হলকে জয়ী করতে পেরে আমি আনন্দিত। দলের সব খেলোয়াড়ের অনবদ্য চেষ্টায় আমরা এ সফলতা পেয়েছি। এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি শারীরিকভাবে উৎফুল্ল করে তুলবে। প্রতিবছর এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে।’

প্রতিযোগিতার বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাস দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রায় দুই বছর পর এ রকম একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সফলভাবে সম্পন্ন করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে ছাত্র-শিক্ষক সবার সহযোগিতায় প্রতিযোগিতাটি আমরা সুন্দরভাবেই সম্পন্ন করেছি। এ জন্য এই প্রতিযোগিতা–সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। এখন থেকে প্রতিবছর এ রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।’