৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪ ১০:০৬
নিউজ ডেস্ক: আগে থেকে ফোন করে এক বিকেলে চলে গেলাম। কাজীবাড়ির দায়িত্বে এখন কাজী সাদউল্লাহ হিল আলীম ও তাঁর বড় ভাই কাজী এহসান উল আলীম। আমার অপেক্ষাতেই ছিলেন সাদ আলীম। দিনের আলো থাকতে থাকতেই মূল বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনার ছবি তুললাম। ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির ইতিহাস বলে গেলেন সাদ আলীম।
কাজীবাড়ির ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। আর ১৮২০ সালে বর্তমান বাড়িটি তৈরি করেন কাজী মির্জা এলাহি বকস। তিনি সাদের পঞ্চম পুরুষ। ১৮৯২ সালে শহর কাজী নিযুক্ত হন কাজী আব্দুর রউফ। সেই থেকে বাড়িটির নাম হয়ে যায় কাজীবাড়ি।
কাজীবাড়ি মূলত একটা হাভেলি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ভাগ। থাকার ঘর, বৈঠকখানা, কিতাবখানা, অন্দরমহল। কাজীবাড়িতে দুটি বৈঠকখানা ছিল। একটি দোতলায়, অন্যটি নিচতলায়। নিচতলার বৈঠকখানা এখন গুদামঘর। দোতলারটি আগের মতোই সুসজ্জিত। কিতাবখানার পাশের কক্ষে পালঙ্ক, সোফা, শোকেস, গ্রামোফোনসহ আগেকার দিনের অনেক আসবাব। বৈঠকখানার পাশের টানা বারান্দাটা অসাধারণ। এরপর খাবার ঘর। বিশাল খাবার টেবিলটায় আমাকে নিয়ে বসান সাদ আলীম। চা খেতে খেতে চলে গল্প।
২০১৭ সালের জুনে কাজীবাড়ি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে একটা দল। সাদও সাগ্রহে তাঁদের আমন্ত্রণ জানান। ছয়জন এসেছিলেন তাঁরা। এই অতিথিদের পেয়েই ভাবনাটা প্রথম মাথায় আসে। কাজীবাড়িতে চালু হয় হেরিটেজ হোম ট্যুর।
সাদ বলে চলেন, ‘কোনো শহরে গেলে সেখানকার ইতিহাস–ঐতিহ্য আমরা ঘুরে দেখতে চাই, জানতে চাই। বিদেশের অনেক পুরোনো শহরে এমন ব্যবস্থা আছে। তার কিছুটা হলেও আমি কাজীবাড়িতে শুরু করলাম। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি থাকে লাঞ্চ বা ডিনারের ব্যবস্থা। অতিথিদের পরিবেশন করা হয় পুরান ঢাকা, বিশেষ করে কাজীবাড়ির শত শত বছরের পুরোনো মেনু। রোজ এখন এখানে আসে দেশি–বিদেশি অনেক অতিথি। তাঁদের সামনে কাজীবাড়িসহ পুরান ঢাকার ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি। যে গল্প একজন ঢাকাইয়ার মুখ থেকেই শুনতে চান তাঁরা।’
অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা এখানে নেই। শুধু ঘুরে বেড়ানো আর খাওয়াদাওয়া। কমপক্ষে ৬ থেকে ১০ জনের একটি দলকে এক বেলার জন্য বাড়িতে আসার সুযোগ দেওয়া হয়। অফিসপাড়ার লোকজনও যোগাযোগ করেন। কেউ গেট টুগেদারের জন্য বুকিং দেন, আবার অনেকেই আসেন ইতিহাসের টানে। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখার পর এখানে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবার পরিবেশন করেন কাজীবাড়ির বর্তমান বংশধরেরা। বিশাল খাবার টেবিলের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয় খাবার। খেতে খেতে নানা রকম গল্পে মেতে ওঠেন অতিথিরা। জানতে পারেন রান্নাগুলোর নেপথ্যের ঘটনা।
কাজীবাড়ির ঐতিহ্য এভাবে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন দুই ভাই। ৫০০ বছরের ইতিহাসে ঠাসা বাড়িটি আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
ঠিকানা: কাজীবাড়ি হেরিটেজ স্টেট, ১২ রোকনপুর, ৩য় লেন কলতাবাজার, ধোলাইখাল রোড, পুরান ঢাকা। আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১