বাংলাদেশের পর ফিফার বড় ধাক্কায় মালদ্বীপ

প্রকাশিত:রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪ ১০:০৬

বাংলাদেশের পর ফিফার বড় ধাক্কায় মালদ্বীপ

নিউজ ডেস্ক: বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ফিফার জরিমানার কবলে পড়েছিলেন মূলত ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে। ফিফা ফান্ডের অর্থে কেনাকাটায় অনিয়ম হওয়ায় কমিটির চেয়ারম্যান তাঁর দায়িত্বের অবহেলা হওয়ায় তাকে এই শাস্তি দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি বাসামের সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও আর্থিক কারণেই।

ফিফার ইন্ডিপেনডেন্ট ইথিকস কমিটি বাসামের উপর মানি লন্ডারিং,দুর্নীতি সহ আরো কয়েকটি অভিযোগের উপর তদন্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাসাম সাধারণ কর্তব্য, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত), পুরস্কারের প্রস্তাব ও গ্রহণ এবং ফিফা ফান্ডের অপব্যবহারের ধারায় শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন।

মালদ্বীপে আর্থিক অনিয়মে সরাসরি ফেডারেশনের সভাপতির উপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে ফিফা। বাংলাদেশে ফিফার ঝড়টি মূলত গেছে বাফুফের বেতনভুক্ত স্টাফদের উপর। বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, অপারেশন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমান বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক জরিমানায় পড়েছেন। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান থাকায় সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী আর্থিক জরিমানায় পড়েছেন।

বাসাম নয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় আসন্ন মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কয়েক মাস পর বাফুফের নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনের আগে ফিফা আবার নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা বা নির্দেশনা দেয় কিনা এ নিয়ে উটকো শঙ্কা কাজ করছে বাফুফের অনেকের মনে। সেই শঙ্কা একেবারে অমুলকও নয় কারণ সালাম মুর্শেদীর ফিফা রিপোর্টে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নাম বিশেষভাবেই রয়েছে। সেখানে ফিফা স্পষ্ট উল্লেখ করেছে, ভেন্ডর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদক সোহাগ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবুর পাশাপাশি ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী ও সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সরাসরি জড়িত।

১০ লাখ টাকার নিচে কোনো কিছু ক্রয় বা সেবা পেতে হলে কোটেশনের মাধ্যমে ভেন্ডর নির্বাচন করে বাফুফে। সেই ভেন্ডর নির্বাচন প্রক্রিয়া ফিফার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় অনেকে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন। ফলে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নাম রিপোর্টে থাকায় একটা শঙ্কা থেকেই যায়। যদিও সালাম মুর্শেদী জরিমানা পরবর্তী এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিলেন,‘ কাজী মোঃ সালাউদ্দিন সরাসরি জড়িত না থাকায় তাকে খারিজ করা হয়েছে। ‘ সালাম মুর্শেদীর এই বিবৃতিই সালাউদ্দিনের দায়মুক্তির জন্য যথেষ্ট ও চূড়ান্ত কিছু নয়।

মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল সংগঠন সাফের অন্যতম সদস্য। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সাফেরও সভাপতি। সংগঠনের অধিভুক্ত দেশের সভাপতির সঙ্গে সাফের নানা বিষয় সম্পর্কিত। ফিফার এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞায় বাসামের ব্যপারে সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেন, ‘ফিফা তাকে নয় মাসের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি আমাদের নির্বাহী কমিটিতে নেই এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সদস্য। আমাদের লিগ্যাল বিভাগ বিষয়টি দেখভাল করছে। এএফসি এই সংক্রান্ত যে পদক্ষেপ নেবে আমরা সেটাই অনুসরণ করব।’

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ফেডারেশনগুলোর মধ্যে বাসাম সবচেয়ে অল্প বয়সী সভাপতি। তার সময়েই দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ সাফ ফুটবল এককভাবে আয়োজন করেছিল। ২০২১ সালের সেই টুর্নামেন্ট মালদ্বীপ সাফের কাছ থেকে স্বত্ব কিনলেও এখনো সেই অর্থ প্রদান করেনি। প্রায় তিন বছর হলেও সেই দেনা শোধ করতে পারেনি মালদ্বীপ। এখন ফেডারেশনের সভাপতি নিষিদ্ধ হওযায় সাফের পাওনা আদায় খানিকটা ঝুঁকিতেই। এই বিষয়ে সাফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের পাওনা প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যক্তির কাছে নয়। মালদ্বীপ ফুটবল এসোসিয়েশন নির্বাচনের পর সাফের পাওনা পরিশোধের নতুন সময় দিয়েছে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।’

বৈশ্বিক ফুটবলের মানের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে পেছনের কাতারে। মাঠের খেলায় যেমন পিছিয়ে তেমনি ফুটবল ফেডারেশন পরিচালনাও রয়েছে অদক্ষতা-অপেশাদারিত্ব ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এর ফলে প্রায় প্রতি বছরই সাফ অঞ্চলের কখনো ফেডারেশন আবার কখনো কর্মকর্তা ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হন। এএফসি সভাপতি হাম্মামের নিষেধাজ্ঞার পর মুলত দক্ষিণ এশিয়ার কর্মকর্তারা এই নিষেধাজ্ঞার তালিলায় পড়তে শুরু করেন৷ হাম্মামের ঘনিষ্ঠ নেপালের গণেশ থাপা, ভারতের আলবার্তো কোলাসো, শ্রীলঙ্কার মনিলাল ফার্নান্দো বিভিন্ন মেয়াদে ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়েন।

সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক বিষয়াদির জন্য ভারতের সাধারণ সম্পাদক কুশল দাস, বাংলাদেশের সোহাগ, আবু,মিজানের পর মালদ্বীপের সভাপতি বাসাম নিষিদ্ধের তালিকায় যোগ হলেন। ফেডারেশনের উপর অন্য পক্ষের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ফিফার নিষেধাজ্ঞায় ছিল। ২০০১ সালে নির্বাচিত কমিটি সরকারি হস্তক্ষেপে ভাঙার ফলে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয়েছিল।