৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ ০১:০৬
রাজনীতি ডেস্ক: রোববার (৩০ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের প্রসঙ্গ ছাড়াও সফর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যেরও বিশ্লেষণ করেছে বিএনপি।
সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক গত ১৫ বছরে একটি অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। যার সুফল দুই দেশের জনগণ ভোগ করছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চয়ই ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের গোলামি চুক্তির কথা স্মরণ আছে। ৫২ বছর পর সেই ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুন ভারতের সাথে সমঝোতার আড়ালে যেসব চুক্তি করা হলো, তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব চুক্তি-স্মারকের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যাই তো সমাধান হয়ে গেল। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সাধারণ কূটনৈতিক দরকষাকষির ন্যূনতম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, একদিকে ভারত থেকে তিস্তার পানি আদায়ে ব্যর্থতা, অপরদিকে অসহায় মানুষের সাথে এ নিয়ে তামাশা— এটি জাতির জন্য নিতান্তই দুঃখজনক। শেখ হাসিনা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছেন। তিস্তা চুক্তি তাদের এজেন্ডাতেই স্থান পায়নি। অনেকে মনে করেন, পানি মানুষের জীবন-জীবিকা ও জলবায়ুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং পানি নিয়ে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে।
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় রেল ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে— প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, অথচ বিশেষজ্ঞরা রেল করিডোরের ফলে বাংলাদেশের লাভ নিয়ে দারুন সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ ট্রেন বাংলাদেশের কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না। একতরফাভাবে ভারতকে করিডোর সুবিধা দেওয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা রেল করিডোরকে ইউরোপের সাথে তুলনা করে বলেছেন, তারা পারলে আমরা পারব না কেন। কথা হলো ইউরোপের ক্ষেত্রে বিষয়টি বহুদেশীয়, আমাদের ক্ষেত্রে যা কেবলই দ্বিপাক্ষিক। তাছাড়া, ইউরোপের সব দেশে সুশাসন ও ন্যায়নীতি বিরাজমান, যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রিন পাওয়ার’ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সমঝোতা স্মারকের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভারতীয় সহায়তার রামপাল ও জাপানি সহায়তার মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যেই সুন্দরবন ও উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছি। ক্রমবর্ধমান কয়লা নির্ভর প্রকল্প সামনে রেখে গ্রিন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কতটা আছে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিনি বলেন, ভারত কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, সরকারি প্রশাসনযন্ত্র, জাতিগঠনমূলক নানাবিধ কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন স্পর্শকাতর অর্থনৈতিক প্রকল্প যেমন— রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাডার স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করছে। এ ক্ষণে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, যে সমুদ্র সম্পদের জন্য বাংলাদেশকে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হয়েছে, বাংলাদেশের সেই সমুদ্র সম্পদকেই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আকাশ সীমান্ত ভারতের হাতে তুলে দিতেই যৌথ স্যাটেলাইট নির্মাণের চুক্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, দলের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিহউল্লাহ ও জহির উদ্দিন স্বপন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১