৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জুন, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার, ২২ আগ ২০২৪ ০২:০৮
গৌছ উদ্দিন। বয়স মাত্র ২৯। ৫ ভাই ১ বোন। সবার মাঝে চতুর্থ তিনি। পরিবার বড় হলেও স্বচ্ছল নয়। মাধ্যমিকের গন্ডি পেরনোর আগেই পরিবারের হাল ধরতে নেমে পড়তে হয়েছে রোজগারের পথে। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন গৌছ। হাসিনা সরকার পতনের আগে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের নিহত হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) গৌছের বড় ভাই আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় সিলেটভিউ’র। তিনি জানান- এ মাসেই (আগস্ট) বিয়ে ঠিক হয়েছিলো গৌছের। পাত্রীপক্ষের সঙ্গে কথা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। এরই মাঝে ঘটলো দুর্ঘটনা।
আবুল কালাম সিলেটভিউ-কে বলেন- আমাদের পরিবারের কয়েকজন ভাতিজা-ভাতিজি গোলাপগঞ্জ এমসি একাডেমির শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট অংশগ্রহণ করে তারা। চাচা হিসেবে তাদের জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে আমার ছোট ভাই (গৌছ) ৪ আগস্ট দুপুরে এমসি একাডেমির সামনে যায়। এসময় তাদের ধাওয়া করে পুলিশ ও বিজিবি। ছাত্র-জনতার সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ বাধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আন্দোলনকারীরা একসময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পিছু হটতে থাকে। তাদের সঙ্গে গৌছও ছিলো। এমসি একাডেমির অদূরে গোলাপগঞ্জ পৌর সদরের কদমতলা এলাকার সানরাইজ রেস্টুরেন্টের সামনে আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরদিন সে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আমাদের চিরতরে ছেড়ে চলে যায়।
আবুল কালাম সিলেটভিউ-কে আরও বলেন- আমার মা আগে থেকেই অনেক অসুস্থ। ছেলেকে (গৌছ) হারিয়ে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন শয্যাশায়ী। গতকালও (বুধবার) ডাক্তার দেখিয়েছি।
হয়রানির ভয়ে মামলা করতে পরিবার রাজি নয় জানিয়ে আবুল কালাম সিলেটভিউ-কে বলেন- আমার মা নিষেধ করেছেন আমাদের মামলায় না যেতে। তিনি আর তার কোনো ছেলেকে কঠিন পরিস্থিতিতে যেতে দিবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনকালে পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৭ জন নিহত হন। ঘটনার দিনই ৫ এবং পরে হাসপাতালে দুজন মারা যান।
ছাত্র-আন্দোলনের সময় সিলেট শহরের পরে সবচেয়ে বেশি উত্তাল ছিলো গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দিন (৪ আগস্ট) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকাদক্ষিণসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান। ওই সকালে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের সরিয়ে দিতে চায় পুলিশ। এসময় সেখানে বিজিবিও উপস্থিত ছিলো। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে ছাত্র-জনতার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীও সংঘর্ষে জড়িত হন। ঢাকাদক্ষিণে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী পুলিশ-বিজির দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি, টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি পিছু হটতে বাধ্য হয়। একসময় ঢাকাদক্ষিণ থেকে গোলাপগঞ্জ পৌরসদর পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকাদক্ষিণেই গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যান। পরে বেলা ২টার দিকে পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতকে লক্ষ্য করে পুলিশ ও বিজিবি গুলিবর্ষণ শুরু করে। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুজন। এছাড়া পৌরসদরে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন শতাধিক ছাত্র-জনতা। ওই দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে মারা যান ৫ জন। হাসপাতালে পরদিন একজন এবং তার পরের দিন আরেকজন মারা যান।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, বরকোট গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, উত্তর কানিশাইল গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে ক্বারি মো. কামরুল ইসলাম পাবেল, দত্তরাইল গ্রামের আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ উদ্দিন, রায়গড় গ্রামের সুরাই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ ও পৌর এলাকার উত্তর ঘোষগাঁওয়ের মৃত মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন।
গোলাপগঞ্জে গুলিতে সাতজন নিহত হলেও এখন পর্যন্ত থানায় বা আদালতে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
গোলাপগঞ্জ থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মুহাম্মদ আব্দুন নাসের বৃহস্পতিবার সিলেটভিউ-কে বলেন- এখনো কোনো নিহতের পরিবার মামলা করতে আসেনি। আসলে পুলিশি সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১