৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জুন, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ২৭ আগ ২০২৪ ০৪:০৮
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। তারা ভারতের শিলং, ডাউকি, জোয়াই, গৌহাটি, করিমগঞ্জ, শিলচর সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি ভারত সফর করে আসা কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তাদের সহায়তা করেছেন সীমান্তের চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের দিন তামাবিল বন্দরে লুটের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে ভাঙচুর করা হয়। এ কারণে বন্দর ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা নিরাপদে চলে যান। তামাবিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা মানবজমিনকে জানিয়েছেন; বাধা দেয়ার কেউ না থাকায় কয়েকশ’ মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত বন্দরের মালামাল লুট করেন। এ সময় সীমান্তের বাংলাদেশ অংশ অরিক্ষত ছিল।
এই সুযোগে তামাবিল ও আশপাশের এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ভারতে ঢোকেন। ওপারে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে কড়াকাড়ি না থাকার কারণে নেতাকর্মীরা ঢুকে যান। পরদিন সীমান্তজুড়ে রেড এলার্ট জারি করার কারণে কেউ ঢুকতে পারেননি। তবে- চোরাই পথে ভারত যাওয়া বন্ধ হয়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম সহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেটের কয়েকজন নেতা গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়েছেন।
এছাড়া সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সহ ঢাকার কয়েকজন নেতা এ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে লন্ডনে চলে গেছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সিলেট জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা শুক্রবার পর্যন্ত ভারতে গেছেন। মোহাম্মদ ফিরোজ নামের এক পর্যটক জানিয়েছেন; বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়া লোকজন সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বিএসএফ কিংবা ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কড়াকড়ি নেই। বরং তারা নিরাপদেই বসবাস করছেন।
সেক্ষেত্রে অনেকেই পুলিশের কাছ থেকে অস্থায়ী পাসও গ্রহণ করেছেন। শুক্রবার কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তার আটকের ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন বলে খবর রটেছিল।
এ কারণে স্থানীয় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের ছাত্র-জনতা এসব নেতাদের খুঁজছেন। সীমান্ত এলাকায় তারা নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভারতে পালাতে গিয়ে মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে ওঠার সময় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না মারা গেছেন। গুলিতে মারা গেছেন বলেও কেউ কেউ দাবি করছেন। ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন- আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন পান্না।
সীমান্ত পার হয়ে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের একটি পাহাড়ে ওঠেন তিনি। পাহাড় পার হয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এতেই তার মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় সীমান্তবাসী জানিয়েছেন- ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক পান্না ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গেও কয়েকজন লোক ছিলেন। দালালরা তাদের সঙ্গে থাকা টাকা নিতে হামলা করে। আর এতে মৃত্যু হতে পারে পান্নার। তার লাশ শিলংয়ের পুলিশের কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাইঘাটের সুরইঘাট এলাকার কয়েকজন চোরাকারবারি। এ খবরের সত্যতা জানতে কানাইঘাটের সাংবাদিকরা সুরইঘাট এলাকায় যান।
স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন; সুরইঘাট সীমান্ত দিয়ে ১৫-১৬ জন ভারতে চলে গেছেন। দালালদের মাধ্যমে তারা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন। আরও কয়েকজন রয়েছে ভারতে যাওয়ার অপেক্ষা রয়েছেন। তবে; সীমান্তের লোকজনের নজরদারি থাকার কারণে গত ২-৩ দিন ধরে কেউ যেতে পারছেন না। কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় চট্টগ্রামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন স্থানীয় জনতা।
পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ডোনা সীমান্ত এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন- সীমান্তের চোরাচালানি চক্রের সদস্যরা ভারতে যেতে লোকজনকে পাঠাতে কাজ করছে। টাকার বিনিয়ে তারা শুধু এবারই নয়, অনেক আগে থেকেই এ কাজে জড়িত রয়েছে। এদিকে সীমান্ত এলাকায় বিচারপতি আটকের ঘটনার পর থেকে আরও বেশি টহল জোরদার করেছে বিজিবি সদস্যরা। সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ যাতায়াত ও চোরাচালান বন্ধে ডোনা, সুরইঘাট, জৈন্তাপুরের লালাখাল, ডিবি’র হাওর, গোয়াইনঘাটে পাদুয়া সহ কয়েকটি এলাকায় বিজিবি সতর্ক রয়েছে।
এসব এলাকার ক্যাম্প কমান্ডাররা জানিয়েছেন- অবৈধ পথে যাতায়াত বন্ধে বিজিবি আগের চেয়ে এখন আরও বেশি সতর্ক ভূমিকা রাখছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে জাফলংয়ের সংগ্রাম ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা ৭ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১