১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টে ২০২৪ ০৪:০৯
বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিম, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে দাম নির্ধারণের পরদিনই খুচরা বাজারে পূর্বের তুলনায় আরও বেড়ে গেছে ডিম-মুরগির দাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পর ডজনপ্রতি ডিম এবং কেজিপ্রতি মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের প্রশ্ন— দাম নির্ধারণ করে কি আগুনে ‘আগুনে ঘি ঢাললো’ সরকার?
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বাজারে কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা পর্যন্ত, যা দুইদিন আগেও ছিল ১৭০ টাকা। বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার মধ্যে, যা পূর্বে ছিল ২৮০ টাকা।
এ ছাড়া, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, যা পূর্বেও একই দামে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়, যা গত শনিবারের বাজারেও ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা ডজন, যা দুইদিন পূর্বেও ১৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম বলেন, নতুন সরকারের কাছে আমাদের অনেক আশা ছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু এর কোনো লক্ষণই আমরা দেখছি না।
বরং যে ডিমের দাম আগে ১৫৫ টাকা ডজন ছিল, দাম নির্ধারণের পর তা হয়ে গেছে ১৭০ টাকা। একইভাবে মুরগির দামও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে গেছে।
আব্দুর রহিম বলেন, কিছুদিন আগে ইন্ডিয়া থেকে কিছু ডিম বাংলাদেশে আনা হয়েছে, যা আনতে খরচসহ প্রতি পিস ডিমের দাম পড়েছে ৭ টাকা। সে হিসেবে তো কোনোভাবেই এই ডিমের ডজন ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না,
সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিমই এতদিন বিক্রি হচ্ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। সে হিসেবে বরং ডিমের দাম আরো কমার কথা, কিন্তু উল্টো দাম আরও বেড়ে গেল।
আরেক ক্রেতা আল-আমীন মিয়া বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ-মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিনদিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে।
যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হালি, সেটা এখন ৫৫ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? কেউই নাই।
তিনি আরও বলেন, ভাবছিলাম আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে সবকিছুর দাম কমবে। এখন তো দেখছি কিছুই কমছে না।
তাহলে সরকার পরিবর্তন করে মানুষের লাভ হলো কী? আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা দু-চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হলো।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম চড়া ছিল; প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। এর মধ্যেই হঠাৎ করে আবার ১৭০ টাকা ডজন হয়ে গেছে, যা গত ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও ডজন ১৫০ টাকার নিচে ছিল।
হঠাৎ করেই দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও তাদের দাবি, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওইসব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে।
আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
নাহিদ রানা নামে এক বিক্রেতা বলেন, শুনেছি সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু গতকাল পাইকারি বাজারে কিনতে গিয়ে দেখি উল্টো বেড়ে গেছে। আড়তদাররা বলছে বাজারে ডিমের সংকট আছে।
ভারতীয় ডিম আসার পরও কেন দাম বাড়ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, এখন পর্যন্ত আমি বাজারে কোনো ভারতীয় ডিম দেখিনি। শুনেছি এসেছে, কিন্তু কোথায় এসেছে সেটা আমরা জানি না।
আমরা সাধারণ বিক্রেতা, ২/৪ টাকা লাভ হলে যে দেশের ডিমই আসুক, বিক্রি করব। তবে দামটা কম থাকলে আমাদের জন্যও ভালো।
মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটা একটু বেশি। গত সপ্তাহেও ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, আজ ১৮০ টাকা। বাজারে মুরগির চাহিদা বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী সাপ্লাই নেই। শুনেছি বন্যার কারণে অনেক খামারির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যে কারণে সেই চাপটা এসে পড়েছে বাজারে।
এর আগে রোববার মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি চিঠিতে ২০২৪ সালের মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১
টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭
পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১