৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ০৮ অক্টো ২০২৪ ১২:১০
‘হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাঁটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে।
আমরা ম্যুরাল বা নামফলক স্থাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি মেনে নেব না। স্মৃতি রক্ষার্থে নামফলক থাকবে কিন্তু কোন স্ক্যাচ বা ছবি নয়।’
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে এই ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষরসহ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জমা দেওয়া হবে।
এছাড়া দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের ম্যুরাল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আমরা বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খালেদার জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি। আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। ফ্যাসিবাদ আমলে তার নামে যে নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই হতে পারে তার স্মৃতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাঁটছে স্বৈরাচার হাসিনার দেখানো পথে। হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাঁটছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তি পূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বলে আমরা মনে করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন ব্যক্তিপূজা শুরু হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সব জায়গায় পরিবর্তনের যে হাওয়া লেগেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, ফ্যাসিবাদের পতনের নতুন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন তিনি ২৪ এর আন্দোলনের স্পিরিটকে (প্রেরণা) ধারণ করবেন। তবে ভিসি স্যারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আশাহত হয়েছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিনি পূর্বের ফ্যাসিবাদের আমলের ভিসিদের পথেই হাঁটছেন।’
ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়ে জবির শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যুরাল সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এটা কোনো ম্যুরাল নই। শুধু ছবি সম্বলিত নামফলক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা কোন মুর্যাল বা ভাস্কর্য নয়। এটা ছবি সম্বলিত ঘোষণা ফলক।’
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা দেয় তৎকালীন বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। তার একটি নামফলক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। হাসিনা সরকারের আমলে তা ভেঙে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। নতুন নামফলক স্থাপন করে তা ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উদ্বোধন ঘোষণা দেন তিনি।
তবে নামফলকে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি স্থাপনের সিদ্ধান্ত আসলে তা নিয়ে সমালোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ১১ ফুটের ম্যুরালের পরিবর্তে ৮ ফুটের নামফলকসহ স্ক্যাচ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছবি বা ম্যুরালের যে রীতি তা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের তৈরি। নতুন করে ম্যুরালের মাধ্যমে ব্যক্তিভিত্তিক রাজনীতি আর চান না শিক্ষার্থীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১