১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টো ২০২৪ ০৯:১০
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলে থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টির পরিমাণ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদের দেখা মেলেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিমদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঝড়টি এই মুহূর্তে মোংলা বন্দর থেকে ৪৮৫ কিলোমিটার দক্ষিন-দক্ষিনপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে যে-কোনো সময় ঝড়টি আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আঘাত হানার খবরে এবারও জান-মাল হারানোর শঙ্কায় আছেন নাজুক বেড়িবাঁধ ও বেড়িবাঁধ না থাকা এলাকার মানুষ। জলোচ্ছাস হলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনেরও ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর গ্রামের মো. তুহিন বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করে। ঝড়ে কি হবে জানি না, আশ্রয়কেন্দ্রও অনেক দূরে।
রামপালের পেরিখালী ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য হেনা বেগম বলেন, রামপালে ও মোংলা উপজেলার বেশিরভাগ অংশ বেড়িবাঁধের বাইরে। যে-কোনো ঝড়-জলচ্ছাসে এই এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ‘দানা’র খবরে সবাই সতর্ক অবস্থানে আছেন। আমরাও মানুষকে সচেতন করছি যাতে জান-মালের ক্ষতি কম হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও ব্লক প্রস্তুত আছে। বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ৩৫/১ পোল্ডারের বাঁধে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী অংশে ৫০০ মিটারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ আছে। প্রয়োজনে সেটি জরুরি মেরামত করা হবে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপালের বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। তাদেরও সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। রহিম নামে এক রিকশাচালক বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি থাকায় রাস্তায় তেমন লোক নেই। মাত্র ৭০ টাকা আয় করেছি। রাতে নাকি বড় ঝড় হবে। কি খেয়ে বাঁচব তা জানি না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলের মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮০০ টন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। এছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আপদকালীন মানুষদের সহযোগিতার জন্য ৩ হাজার ৫০৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছেন এবং ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল আহসান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরি সভা করেছি। জেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও গর্ভবতী নারীদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। গবাদি পশু ও মাছের ঘেরগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। সবাইকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র খবরে সতর্ক অবস্থানে আছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিদেশি জাহাজ ও সব প্রকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
এখন পর্যন্ত বন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপসচিব মো. মাকরুজ্জামান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র খবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জাহাজগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। বন্দরে এখন নিজস্ব ১ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সংকেত তিন পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১