শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই নিউজ করার অনুরোধ জবি সভাপতির

প্রকাশিত:রবিবার, ১০ নভে ২০২৪ ০২:১১

শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলেই নিউজ করার অনুরোধ জবি সভাপতির

শিবিরের কোনো দায়িত্বশীল বা সদস্যের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ টেন্ডারবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে সংবাদ করার অনুরোধ জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন শিকদার।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোড়ের স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্তোরাঁয় ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় ৬০ জনের বেশি সাংবাদিক অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত ও পরামর্শ দেন।

শিবির সভাপতি বলেন, আমাদের সংগঠনের মোট সদস্যদের মধ্যে থেকে যারা কমিটির দায়িত্বে আছেন, আপনারা তাদের দেখতে পাচ্ছেন। নেতৃত্বে আনার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আল্লাহ ও রাসুল সা.-এর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া, আদর্শের সঠিক জ্ঞানের পরিসর, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, শৃঙ্খলাবিধানের যোগ্যতা, মানসিক ভারসাম্য, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, কর্মের দৃঢ়তা, অনড় মনোবল, আমানতদারিতা এবং পদের প্রতি লোভহীনতার দিকে অবশ্যই নজর রাখা হয়। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যিনি নেতৃত্বে আসতে চাইবেন, তিনি পূর্বেই নেতৃত্বের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেহেতু কেউ নেতৃত্বে আসার দাবি করতে পারে না, তাই আমাদের সংগঠনে পদ নিয়ে কোনো ধরনের কোন্দলও নেই।

ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, আল্লাহ প্রদত্ত রাসুল সা. প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাছাড়া আমাদের প্রতিটি কাজ নিজস্ব কর্মপদ্ধতির আলোকে পরিচালিত হয়। আমাদের কর্মপদ্ধতি নামে আলাদা বই আছে, সেটা পড়লে আপনারা জানতে পারবেন বিস্তারিত। অমুসলিম ছাত্রদের নিয়ে আমাদের কাজ করার অবশ্যই পরিকল্পনা আছে।

গোপন রাজনীতি বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গোপন রাজনীতি করার কোনো উদ্দেশ্য নেই, আমরা কোনো সময় গোপনে রাজনীতি করি না। কিন্তু অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে দীর্ঘসময় আমাদের দমনপীড়ন করে রাখা হয়েছে।

মিডিয়া জাতির সামনে শিবিরকে দানবের মতো উপস্থাপন করেছে উল্লেখ শিবির সভাপতি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ক্যাম্পাসগুলোতে দানব বানিয়ে রাখা হয়েছে, এই কাজটা করা হয়েছে মিডিয়ার মাধ্যমে।

শিবির কোনো লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন নয় দাবি করে ইকবাল হোসেন বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্য কোনো সংগঠনের মতো আমাদের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয় না। শিবিরে সব সদস্য ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করেন। এ ছাড়া প্রতিটা শাখা ইউনিটে সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করেন। দেশের ইসলামপন্থি অন্য দলের সঙ্গে আমাদের যেরকম সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে, জামায়াত ইসলামীর সঙ্গেও আমাদের সেরকম সম্পর্ক রয়েছে।

ছাত্র সমস্যা সমাধানে শিবির সবসময় কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, কনসাস স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে ছাত্রশিবির সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে।

শিবির সভাপতি ও সেক্রেটারির কোনো আলাদা গ্রুপ আছে কি না জানতে চাইলে শিবির সভাপতি বলেন, আমরা আল্লাহ নির্দেশিত একে অপরের সঙ্গে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো সম্পর্ক রক্ষা করার চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে সভাপতি ও সেক্রেটারির মধ্যে আলাদ গ্রুপ থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

জবি শাখা শিবির সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সমাজের সঠিক অবস্থা তুলে ধরা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা সমাজের দর্পণ। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী আপনারা সত্য ও মিথ্যাকে মিলিয়ে ফেলবেন না। অন্যায়-জুলুমকে কলমের মাধ্যমে তুলে ধরবেন।

তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে আমরা নিজেদের জনশক্তি হিসেবে কল্পনা করি। কে শিবির করে কে শিবির করে না, এভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের বিভক্ত করি না। কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে আমরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের আলোকে সহায়তা করার চেষ্টা করি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রাধান্য পায়।

শিবিরের প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে জবি শাখার সেক্রেটারি বলেন, আমি আসাদুল ইসলাম। আমি গত সব যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। আমার নামে চারটি মামলা রয়েছে। প্রচার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। আমাদের ক্লাসের অনেকেই জানত আমরা শিবির করি। আর কীভাবে দেখাব আমরা প্রকাশ্যে আছি।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর, জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আস সাইফসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। সাংবাদিক নেতারা শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি, দরিদ্র ছাত্রদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও নারীদের সহায়তা ও সমর্থন বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

এসময় জবি শাখা শিবিরের অফিস সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক শাহিন আহমেদ, দাওয়াহ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, বাইতুল মাল সম্পাদক মোহাম্মদ শাওন সর্দার, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইনুদ্দিন, স্কুল বিতর্ক ও তথ্য প্রযুক্তি নাহিদ হাসান রাসেল, আবাসন ও পাঠাগার সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ, এইচআরডি ও ব্যবসায় শিক্ষা সম্পাদক মো. জাহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ