নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে : তারেক রহমান

প্রকাশিত:শনিবার, ২৩ নভে ২০২৪ ০২:১১

নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার বিরুদ্ধে দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছে, সেই স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই। স্বৈরাচারেরা তাদের দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, দেশবাসী বিএনপিকে দায়িত্ব দিতে চায়। দায়িত্ব নিতে হলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্ব নেওয়ার মতো নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী দিনে চুয়াডাঙ্গায় কারা নেতৃত্ব দেবেন, সেই নেতা যেমন বাছাই করে নেব, তেমনি আসুন আজ সকলে মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা যে যেই পর্যায়ের নেতা বা কর্মী হয়ে থাকি না কেন, সেটা বড় কথা না। আপনি একজন বিএনপির কর্মী, আপনি একজন শহীদ জিয়ার সৈনিক। তাই সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনার কাছে আপনার এলাকার মানুষের প্রত্যাশা কী এবং তা অনুধাবন করে কাজ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম হলেই প্রকৃত ব্যক্তিগুলো নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন। যারা সত্যিকার অর্থেই জনগণের কথা বলবেন, জনগণের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করবেন। প্রতিটি সেক্টরের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে চিন্তা করবেন। একটি প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন, তাহলেই সেটা সম্ভব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যে দেশের রাজনীতি রুগ্ণ, সে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই রুগ্ণ। বিগত স্বৈরাচার সরকার দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এগুলো আবার জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হলে নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।

সম্মেলনের শুরুতে দলের প্রয়াত নেতাকর্মীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার আবদুল জব্বার।

এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তরুণদের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। দেশ এবং জাতির জন্যই নির্বাচন দরকার। তরুণদেরকে অবশ্যই জায়গা করে দেব আমরা। কিন্তু সেই তরুণদেরকেও একইসঙ্গে সবাইকে নিয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে। এখন অনেক নব্য নেতৃত্ব মাঝেমধ্যে হুমকি দিচ্ছে, সব সংস্কার না করে নির্বাচন দিবে না। আমরা বলতে চাই নির্বাচন বিএনপি শুধু বিএনপির জন্য চায় না। বিএনপি নির্বাচন চায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত প্রথম ফ্যাসিবাদের অবতারণা করেন সেই শেখ মুজিব। যাকে মানুষ অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছিল। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কোনো দল নয় তারা ফ্যাসিবাদী দল। তাদের বডি ক্যামিস্ট্রিতে গণতন্ত্র নেই। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ইউনিক নেতৃত্ব’ দিয়েছেন। দমন-পীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে এক ভয়ংকর স্বৈরাচার রূপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ, শেষে জনগণের রোষে তারা দেশ থেকে পালিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে দেশের সকলেই যে-সব সংস্কারের কথা বলছেন, এগুলো সত্যিকার অর্থেই বাস্তবায়ন সম্ভব যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন। এর বাইরে, সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য জনপ্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু) ও নিতাই রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন এবং কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ (রুমী) বক্তব্য দেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, জাসাসের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবীব সেলিম, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি কামরুজ্জামান, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রউফুন নাহার প্রমুখ।

এদিকে, রাত ৮টার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থীকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান শেষে গণনা চলছে। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির উপকোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হাসান খান বাবু।