এলাকাভেদে ডেঙ্গুর ওষুধ প্রয়োগে বৈষম্যের অভিযোগ

প্রকাশিত:রবিবার, ০১ ডিসে ২০২৪ ০৩:১২

এলাকাভেদে ডেঙ্গুর ওষুধ প্রয়োগে বৈষম্যের অভিযোগ

ডেঙ্গু মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকার এলাকাবাসী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বক্তারা। তাদের দাবি, দেশের অভিজাত এলাকাতেই শুধু নিয়মিত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনের স্প্রে করা হলেও অনুন্নত এলাকা এবং বস্তিতে কোনো ধরনের স্প্রে করা হয় না। করা হলেও সেটা দেখা যায় হঠাৎ হঠাৎ। এমনকি অনুরোধ করলেও কোনো ফল পাওয়া যায় না।

রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জণসচেতনতামূলক আলোচনা ও গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এর সমাধান হিসেবে দ্রুত বাংলাদেশে ভ্যাক্সিন এনে চালু করার জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য ও প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে আলোকপাত করতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।

অনুষ্ঠানে বিপিএমসিএর সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, প্রায়ই আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, মশার ওষুধ প্রয়োগে গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীসহ অভিজাত এলাকাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলেও বস্তি এলাকাগুলোর ব্যাপারে বরাবরই বৈষম্য করা হয়নি। আমরা সরকারকে এবিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ করব।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে যেসব শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, দেখা যায় তারা সারাবছর ধরে নিবিড় নজরদারি চালায়, যাতে করে কোথাও পানি জমে না থাকে। আমাদেরকেও সে পথেই হাঁটতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিপিএমসিএ ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বাজার এলাকাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা। এই কার্যক্রমটি সরকারের পাশাপাশি বছরব্যাপী পালন করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্টার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার ও বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।

এসময় ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ। এই রোগটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হালকা ফ্লু থেকে গুরুতর এবং সম্ভাব্য মারাত্মক অবস্থা পর্যন্ত নানারকম উপসর্গ উপস্থাপন করে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যথা, ফুসকুড়ি এবং হালকা রক্তপাত। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে অগ্রসর হতে পারে, উভয়ই সময়মতো চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ ছাড়া জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি হতে পারে।

বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্টার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিক্যাল লক্ষণ এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে এবং বছরের শুরু থেকে ৯০,৭৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

এর প্রতিকার হিসেবে তিনি মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাস করাকে জোরারোপ করেন। এজন্য তিনি প্রজনন স্থান নির্মূল, মশা নিরোধক এবং জাল ব্যবহারসহ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, নিয়মিতভাবে জলের পাত্রগুলো খালি করা এবং পরিষ্কার করে সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি ব্যবহার করা এবং সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়।

এর সঙ্গে পোকামাকড় নিরোধক মশারি ব্যবহার করা বিশেষ করে শিশুদের মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতাই একমাত্র সমাধান বলে অভিহিত করেন। এর জন্য ব্যাপক প্রচারণা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন।