সিলেটের তিন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ০৩ ডিসে ২০২৪ ০২:১২

সিলেটের তিন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

পণ্য পরিবহনে জটিলতা ও ভারতীয় লোকজনের বাধার কারণে সিলেটের শেওলা এবং জকিগঞ্জ স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি-রপ্তানি ছাড়া বাবি পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এ সকল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কোনো পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি বা বাংলাদেশ থেকে যায়নি।

এদিকে পাথরবাহী ট্রাকে কাদামাটি ও আবর্জনা এবং ওয়েট স্কেলের ওজন জটিলতার কারণে ১৬ দিন ধরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর-কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে সীমান্তের উভয়পাড়ে আটকা পড়েছে শত কোটি টাকা মূল্যের পণ্যবোঝাই কয়েক শতাধিক ট্রাক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সিলেট সীমান্তের ওপারে বিক্ষোভ করছেন ভারতীয় লোকজন। সনাতনী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে ‘চল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে গত রোববার ভারতের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশনে মিছিল নিয়ে জড়ো হন হিন্দু ধর্মের কয়েকশ লোক।

বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের প্রস্তুতি নিলে বিএসএফ ও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে গতকাল সোমবার থেকে সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল সোমবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতের করিমগঞ্জ (শ্রীভূমি) শুল্ক স্টেশনে। সোমবার দুপুর থেকে শ্রীভূমি শুল্ক স্টেশন এলাকায় বিক্ষোভ করেন ভারতের সনাতনী ঐক্য মঞ্চ সংগঠনের সদস্যরা। পরে তাদের বাধায় জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের কোনো পণ্য বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি। আজ সকাল থেকেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে জকিগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনেও।

এ বিষয়ে শেওলা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ ইমরান মাতব্বর বলেন, আজ সকাল থেকে আমাদের বন্দরে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। সারাদিনে ৬ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে একজন ভারতে গিয়েছেন এবং ভারত থেকে ৫ জন বাংলাদেশে এসেছেন। আজ সারাদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও গতকাল আমদানি রপ্তানি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।

জকিগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফুদ্দিন বলেন, আজ সকাল থেকে এই স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে কোনো পণ্য আসেনি। গতকাল সকালে দুই দফায় ৬ টন কমলালেবু এসেছিল। এই স্টেশন দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পণ্য একটু কম আসে। তবে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক ছিল।

পাথর-কয়লা আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, পাথরবাহী ট্রাকে কাদামাটি, আবর্জনা থাকলেও স্কেলে কড়াকড়ি ওজন নির্ণয়ের কারণে কয়লা-পাথর আমদানি থেকে বিরত রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় আমদানি অব্যাহত রাখলে পাথরবাহী প্রতি ট্রাকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা করে লোকসান গুণতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না।

তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানিকারক মেসার্স মিসবাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিসবাহউল আম্বিয়া বলেন, আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরের ওজন জটিলতায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ অবস্থায় আমাদের ব্যবসা দূরে থাক, বাড়ি থেকে এনে লোকসানের টাকা দিতে হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।

সিলেট জেলা পাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. আতিক হোসেন বলেন, পাথর আমদানি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় আমদানি শুরু হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ