৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:বুধবার, ১১ ডিসে ২০২৪ ০৪:১২
জাতীয় নির্বাচনের নামে পরপর তিনটি প্রহসনে দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অসংখ্য তরুণ-তরুণীর বয়স হয়েছে ভোট দেওয়ার। কিন্তু তারা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনের প্রতি তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
জামায়াতে আমির বলেন, আমরা যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে। বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত্ব সময় নয়, যৌক্তিক সময় দিতে চাই। পাশাপাশি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সমান তালে যুদ্ধ করা প্রবাসীদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন।
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এ বছরের ৫ আগস্ট একটা কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন উপহার পেয়েছে। দেশে-বিদেশে অংশগ্রহণকারী এই পরিবর্তনের মূল কারিগর, নায়ক ও সহযোদ্ধা বিশেষভাবে যারা তাদের মূল্যবান জীবন দিয়ে জাতির এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এনে দিয়েছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। দেশের ভেতরে ও বিদেশের মাটিতে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকেই জেল-জুলুম এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখনও কোনো কোনো দেশের কারাগারে আমাদের নাগরিকেরা বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মুক্তির ব্যবস্থা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।
আমিরে জামায়াত বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে পতিত স্বৈরাচার সরকার জাতির সব অধিকার হরণ করেছিল। ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, কথা বলার অধিকার সর্বোপরি নিজের ভোটটি পছন্দের প্রার্থীকে দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক প্রতিভাবান মানুষকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়ার পরিবর্তে অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাউকে কাউকে আবার ওএসডি করে রাখা হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে থাকার কারণে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তান্ডবতার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেই হত্যা এবং ধ্বংসলীলা বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। পতিত সরকারের কাছে জনগণের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রুর কোনো মর্যাদা ছিল না, কোনো নিরাপত্তা ছিল না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পতিত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এতো ক্ষতি অন্য কোনো দলের হয়নি। আমরা এ পর্যন্ত সারাদেশে পাঁচ শতের অধিক সহকর্মীকে হারিয়েছি। হাজার হাজার মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে জেলে নেওয়া হয়েছে। কার্যত আমাদের বাড়িই জেলে পরিণত হয়েছিল। জেলের ভেতরেও জেল, বাইরেও জেল। গোটা দেশটাকেই একটা কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। অনেক বিবেকবান নিরীহ মানুষ এ তাণ্ডবে কারণে তখন দেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে ঠিকানা খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেক প্রতিভাবান সাংবাদিক তাদের বিবেকের জায়গা থেকে সত্য রিপোর্ট করার কারণে নিরাপদ থাকতে পারেননি। ফলে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।
‘২০১৩ সালে আমরা লক্ষ্য করেছি শাহবাগের কেন্দ্রস্থলে যে আসর বসানো হয়েছিল, যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন দুটি সরকার প্যারালাল চলছিল। একটা সরকার ছিল সংসদ কেন্দ্রিক আরেকটা সরকার ছিল শাহবাগ কেন্দ্রিক। শাহবাগের সরকার সংসদের সরকারের চাইতে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিল। তাদের কথায় জাতীয় পতাকা উঠত-নামত। জাতি বিস্ময়করভাবে এ সমস্ত বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করেছে। এই সমস্ত ট্রমা নিয়ে জাতি কোনো রকমে বেঁচেছিল।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে পনেরো বছরের জগদ্দল পাথর সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রী, যুব সমাজের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট সরে গেছে। কিন্তু এই সরিয়ে দেওয়াটাও খুব সুখের ছিল না। কমবেশি দুই হাজার সন্তানকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। স্থল থেকে খুন করা হয়েছে এবং আকাশ থেকেও গুলি করে খুন করা হয়েছে। এ যেন জাতির বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ ছিল। আমরাও তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আরেকবার।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি জানিয়েছি যে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠ তৈরি করুন। এর জন্য একটি রোডম্যাপ দিন। সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ আপনাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী সংস্কারের মধ্যে রাষ্ট্রের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিগত সরকার জুলুম করে বহু জায়গায় তৎকালীন বিরোধীদলে যারা ছিলেন তাদের এলাকাগুলোকে টার্গেট করে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। তারা আসন পুনর্বিন্যাসের নামে জুলুম করেছে। এগুলো আবার পুনর্বিন্যাস করা লাগবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১