ঢাকার ফাইনালে ইউক্রেনের অলিম্পিয়ান শাটলার

প্রকাশিত:শুক্রবার, ২০ ডিসে ২০২৪ ০৩:১২

ঢাকার ফাইনালে ইউক্রেনের অলিম্পিয়ান শাটলার

শুক্রবার ছুটির দিন ও শীতের বিকেলে ভালোই জমেছিল পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন লড়াই। নারী এককের সেমিফাইনালে ইউক্রেনের পলিনা বুহরোভা ও আমেরিকান ইসিকা জয়সওয়ালের খেলা হয়েছে সেয়ানে-সেয়ানে। দুই জনই এক সেট করে জেতায় খেলা গড়ায় তৃতীয় সেটে। তৃতীয় সেটেও দুই জনের ২০-২০ পয়েন্টে সমতা ছিল। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের পলিনা ২৪-২০ পয়েন্টে জিতে ফাইনালে উঠেন।

পলিনা বুহরোভা সদ্য সমাপ্ত প্যারিস অলিম্পিকে খেলেছেন। অলিম্পিয়ান এই শাটলারের বাংলাদেশে আগমন নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ইতিবাচক। ঢাকার আমন্ত্রণমূলক এই টুর্নামেন্টে আসার কারণ সম্পর্কে পলিনা বলেন, ‘বছরের শেষ মাসে আমার একটি টুর্নামেন্ট খেলা প্রয়োজন ছিল। এটা চ্যালেঞ্জিং টুর্নামেন্ট। ব্যাডমিন্টনের তৃতীয় শীর্ষ স্তর। তাই বছরের শেষ টুর্নামেন্ট হিসেবে এটা বেছে নিই।’

ঢাকায় আয়োজিত সানরাইজ-ইউনেক্স ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী নারী শাটলারদের মধ্যে পলিনার বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংই সবচেয়ে কম। স্বাগতিক বাংলাদেশ ও অন্য বিদেশি শাটলারদের মান তার চেয়ে নিচেই। এরপরও এই টুর্নামেন্টের মান ও আয়োজনে মুগ্ধতার কথাই শোনালেন এই অলিম্পিয়ান, ‘আমরা এখানে খেলেই হোটেলে যাচ্ছি। অন্য ম্যাচগুলো সেভাবে দেখা হয় না। কোর্ট ও পরিবেশ সবকিছুই সুন্দর ও ভালো লেগেছে।’

যেকোনো ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন অলিম্পিকে খেলা। পলিনা মাত্র ২০ বছর বয়সেই সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। প্যারিস অলিম্পিকে খেলা সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘আসলেই অলিম্পিক সকল ক্রীড়াবিদের জন্য আলাদা মোহ। আমি খুব আনন্দিত এবার প্রথমবারের মতো অলিম্পিক খেলেছি। এবার পদক পাইনি, সামনে পদক জয়ের চেষ্টা করব।’ অলিম্পিকের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় খেলোয়াড়দের। নিজের ব্যাডমিন্টন পরিশ্রম নিয়ে পলিনা বলেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা অনুশীলন করি। এরপর ভিডিও বিশ্লেষণ ও বিশ্রামে কাটে আরও কয়েক ঘণ্টা। টুর্নামেন্টের সময় অনুশীলনের তারতম্য হয়।’

ইউক্রেন ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স ও জিমন্যাস্টিক্সের প্রচলন এবং জনপ্রিয়তা বেশি। ওই দেশ থেকে অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টনে অংশগ্রহণ বেশ কৃতিত্বপূর্ণই। তার ব্যাডমিন্টনে আগমনের গল্পটিও বেশ মজারই। ‘স্কুলে পড়াবস্থায় আমি একটু স্থুলকায় ছিলাম। গানও শিখতাম। গানের শিক্ষক বললেন ওজন কমাতে। আমাদের স্কুলে ব্যাডমিন্টন প্রচলন ছিল। তখনই ব্যাডমিন্টন বেছে ছিলাম। ওজন কমার পাশাপাশি খেলাটায় মজাও পেলাম। এরপর থেকেই ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে’, গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন পলিনা।

অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই ব্যাডমিন্টনে আসা পলিনার। তার পরিবারের কেউ খেলাধুলার সঙ্গে সেভাবে জড়িত ছিলেন না। পরিবার প্রথমদিকে ব্যাডমিন্টনকে সেভাবে সমর্থনও করত না বলে জানান পলিনা, ‘আমার মা জিমন্যাস্টিক্স ও বাবা অ্যাথলেটিক্স করতেন ছোটবেলায়। সেটা তেমন কোনো পর্যায়ে ছিল না। আমি ব্যাডমিন্টন সিরিয়াসলি নেওয়ার পর তারা একটু উদ্বিগ্ন ছিলেন। শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জিং ছিল, পরবর্তীতে সফল হওয়ার পর তারাও সহায়তা করেছে।’

পলিনা ইউক্রেনের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। নিজ দেশে গত ২-৩ বছর থাকতে পারছেন না যুদ্ধের জন্য। এখন ইতালির পালেরমো শহরে থাকেন। তার পরিবারও ইতালিতে থাকছে। ইতালিতে এসে জুটি গড়েছেন ইউক্রেনের আরেক নারী শাটলার ইয়েভলিনা কান্তেমার সঙ্গে। ঢাকায় একসঙ্গে দ্বৈত ইভেন্টেও খেলছেন তারা। তাদের সঙ্গে এসেছেন একজন ইতালি কোচও।

ইতালির পালেরমো শহরে বেড়ে ওঠা এক বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল ব্যাডমিন্টনের গ্যালারিতে। তিনি বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও ইতালিতে পলিনাদের সঙ্গে একই ক্লাবে খেলেন। ইউক্রেনের দুই শাটলারেরই তার সঙ্গে বেশ সখ্য। তার দেওয়া তথ্য– ইউক্রেনের দুই শাটলার গত দুই বছর ইতালীয় নারী কোচের অধীনে অনুশীলন করছেন। সেই কোচের স্বামী তাদের নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। ইউক্রেনের শাটলারদের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ও সরঞ্জামের খরচ বহন করে ‘ভিক্টর’ কোম্পানি।