মালয়েশিয়ায় চলছে ধরপাকড়, কঠিন সময়ের মুখোমুখি প্রবাসীরা

প্রকাশিত:শনিবার, ১১ জানু ২০২৫ ০৩:০১

মালয়েশিয়ায় চলছে ধরপাকড়, কঠিন সময়ের মুখোমুখি প্রবাসীরা

গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ প্রত্যেকটি প্রদেশে চলছে ধরপাকড়। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে নানা নামে চলছে পুলিশি অভিযান।

দেশটির অভিবাসন বিভাগ বলছে, অভিযানের জন্য সেসব স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে বিদেশিরা অবৈধভাবে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এখন থেকে পুলিশের ফোকাস বিদেশিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকবে এবং বিদেশি নাগরিকদের অনুপ্রবেশ রোধে সমন্বিত অভিযান ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হবে।

এমন পরিস্থিতিতে কঠিন সময় পার করছেন দেশটিতে বসবাসরত বৈধ ও অবৈধ প্রবাসীরা। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অভিবাসন বিভাগের কয়েকটি অভিযানে সাতশর বেশি অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন আড়াই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি।

১০ জানুয়ারি রাজধানী কুয়ালালামপুরে পেটালিং স্ট্রিটে অভিযান চালিয়ে ৩৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। অবৈধ পণ্য বিক্রির একটি হটস্পট এলাকায় ইমিগ্রেশন বিভাগের ‘কেএল স্ট্রাইক ফোর্স’ নামের অভিযানের মাধ্যমে এসব অভিবাসীকে আটক করা হয়।

কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশনের পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সৌপি ওয়ান ইউসুফ বলেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের অভিযানে ৭৭ জন বিদেশি নাগরিককে তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে যাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই এমন ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, চারজন মিয়ানমারের নাগরিক, দুইজন পাকিস্তানি এবং মরিশাস ও নেপালের নাগরিক রয়েছেন। যাদের বয়স ২২ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।

সৌপি ওয়ান বলেন, পাসের অপব্যবহার, তাদের কাছে বৈধ অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস এবং ওয়ার্ক পারমিট ছিল কিন্তু তারা নির্ধারিত স্থানে বা তাদের প্রকৃত নিয়োগ কর্তার সঙ্গে ছিলেন না।

তিনি আরও বলেন, যারা পাসের অপব্যবহার করেছেন তাদের বেশিরভাগই নির্মাণ পাস, পরিষ্কার ও ধোয়ার সেক্টর পাস এবং অন্যান্য অনুরূপ সেক্টর পারমিটধারী ছিলেন। এই বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগকারীদের প্রাঙ্গণও পরিদর্শন করা হয়েছে এবং চারজন স্থানীয় ব্যবসা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে।

অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিদেশিদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝামাঝি এবং সেইসঙ্গে ভালো পরিবহন সুবিধা মালয়েশিয়াকে এ অঞ্চলে শ্রম গতিশীলতার প্রধান প্রবেশদ্বার করে তোলে। দ্রুত

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মিলিত হয়ে মালয়েশিয়া দ্রুত বর্ধনশীল খাতে যেমন নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন এবং পরিষেবাগুলোতে বিভিন্ন কাজের সুযোগ প্রদান করে। এ কারণগুলো মালয়েশিয়াকে বিদেশি কর্মীদের জন্য প্রধান আকর্ষণ করে তোলে যারা তাদের নিজ দেশের তুলনায় উন্নত জীবন এবং আরও কাজের সুযোগ খুঁজতে আসেন।

তারা বলেন, এই বিদেশিদের উপস্থিতি চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, যা উপেক্ষা করা যায় না। মালয়েশিয়ায় বিদেশি অভিবাসীদের ইস্যুতে গভীর মনোযোগ এবং একটি সামগ্রিক সমাধান প্রয়োজন যেন দেশের অর্থনীতির চাহিদা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য আরও

কার্যকরভাবে অর্জন করা যায়। মালয়েশিয়ায় বিদেশি অভিবাসীদের উপস্থিতির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু খাতে শ্রমের প্রয়োজন, বিশেষ করে যেগুলো স্থানীয় শ্রমিকদের অনাগ্রহী। নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন এবং পরিষেবা খাতগুলো বিদেশি শ্রমের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর কয়েকটি।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১.৭ মিলিয়নেরও বেশি বৈধ বিদেশি কর্মী রয়েছে। অনুমান করা হয়, ২ থেকে ৪ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী রয়েছে যারা এখনো দেশটিতে কাজ করছেন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই। তাদের বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে এসেছেন ভালো চাকরির সুযোগ খুঁজতে।

বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরশীলতা স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে। বিদেশি শ্রমিকদের উপস্থিতি, বিশেষ করে স্বল্প দক্ষ সেক্টরে চাকরির বাজারে চাপ সৃষ্টি করে। ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়ার ডেটায় দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিদেশি কর্মীদের উপস্থিতির কারণে স্থানীয় মজুরির হার কমে যায়। বিশেষ করে যেক্ষেত্রে নির্মাণ এবং গাছ লাগানোর মতো শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।

এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ এবং অন্য সংস্থাগুলো অভিযান জোরদার করেছে। এ অভিযানের মধ্যে রয়েছে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের প্রধান অবস্থান হিসেবে পরিচিত নির্মাণ সাইট, কারখানা এবং কৃষি এলাকা।

এদিকে বিদেশি কর্মীদের ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য মালয়েশিয়া সরকার আরও ব্যাপক ই-ওয়ার্ক সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা করছে। এ ব্যবস্থাটি নিয়োগকর্তাদের তাদের বিদেশি কর্মীদের আরও স্বচ্ছভাবে নিবন্ধন করার অনুমতি দেবে। পাশাপাশি বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এ পদক্ষেপ শোষণের চর্চা কমানোর পাশাপাশি মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে আশা করা হচ্ছে।