১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:সোমবার, ২৭ জানু ২০২৫ ০১:০১
আংশিক সংস্কার বিচারিক ইনসাফের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটি বলছে, ৪০ লাখেরও বেশি মামলার জট খোলার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার তদন্তে ফৌজদারি মামলা পুনর্বিবেচনার কমিশন দরকার।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সংস্কারমূলক অধ্যাদেশের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো বাস্তব রূপ লাভ করেনি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ১৬ মার্চ ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অধ্যাদেশ’ জারি করলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিচার বিভাগকে দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংসদে আইনটি পাস করেনি। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমাদের জাতীয় অগ্রগতির একটি অপরিহার্য শর্ত। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ২১ জানুয়ারি ‘বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে।
এই অধ্যাদেশ উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
ব্যারিস্টার যোবায়ের আরও বলেন, সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর যে ঘোষণা দেন, এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। দীর্ঘ দিন ধরে এবি পার্টি এই দাবি জানিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, এই সংস্কার উদ্যোগে জনগণ আংশিকভাবে উপকৃত হবে। সংস্কার বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও বার কাউন্সিলসহ আরও কতিপয় সংস্কার না হলে শুধু এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে জনগন বিচারালয় থেকে কাঙ্খিত ন্যায় বিচার পাবে না।
তিনি আরও বলেন, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ফৌজদারি অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্ত ব্যতীত পুলিশের ভূমিকা থাকতে পারবে না। দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্তমান অধ্যাদেশে শুধু মাত্র আইন পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। এবি পার্টি মনে করে উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন কমন ‘ল’ সিস্টেমে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, তেমনি আইনি দৃষ্টিকোন ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য রাখতে জনগণের প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি জরুরি বলে মনে করেন ব্যারিস্টার যোবায়ের।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে কোরাম সদস্য ৩ এর বদলে ৫ জন করা জরুরি।
বয়সসীমা নির্ধারণ সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার যোবায়ের বলেন, বয়সসীমা নির্ধারণের পরিবর্তে সংবিধান অনুযায়ী যোগ্যতার বিধান কার্যকর করা জরুরি। সেখানে সাক্ষাৎকার মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রকাশ্যে আনা, প্রার্থীদের মেধা, অভিজ্ঞতা, ও সততাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ৪০ লক্ষাধিক মামলার জট কাটাতে বিচার বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেক স্তরে বিচারিক প্রশাসন গঠন, আপিল করার সময় সীমা নির্ধারণ, পরাজিত পক্ষকে খরচের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে বিচারিক সচিবালয়ের অধীনে ইউনিয়ন/উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
তিনি লাখ লাখ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী ‘ফৌজদারি মামলা পুনর্মূল্যায়ন কমিশন’ গঠন করার দাবি জানান।
আদালত প্রাঙ্গণে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মিছিল, মিটিং, স্লোগান, ব্যানার, পোস্টারিং করে আদালতের ভাবমূর্তি হেয় করবার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বারকে বিচারিক আদালতের সীমানা থেকে আলাদা করবার ব্যবস্থা করতে হবে— বলেন ব্যারিস্টার যোবায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার ও উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু নিম্ন আদালতে পিপি, এপিপি নিয়োগের কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নেই। তেমনি আমরা মনে করি নিম্ন আদালতে শুধু বিজিএস পরীক্ষা দিয়েই একজন আইনের ছাত্র বিচারপতি নিয়োগ পেতে পারে না। বিচারক নিয়োগ পেতে কমপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা নাহলে নিম্ন আদালতে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১