পরিচালক-যুগ্ম পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা

প্রকাশিত:বুধবার, ১২ ফেব্রু ২০২৫ ০৩:০২

পরিচালক-যুগ্ম পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে কর্মচারী ও আউটসোর্সিং কর্মীদের দিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় পরিচালক-যুগ্ম পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলমের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকরা কাজে ফিরে যাবেন না।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে স্বাচিপপন্থি চিকিৎসকদের আবারও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ফিরিয়ে আনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে চিকিৎসকদের ওপর হামলা করে হাসপাতালটির কর্মচারীরা। এমনকি হামলাকারীরা হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদের অনুগত বলে অভিযোগ ওঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বর্তমান পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট একজন চিকিৎসক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে গিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, এমনকি তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেও গালি দিয়েছেন। এরপরও সেই দীন মোহাম্মদ অদৃশ্য ক্ষমতা বলে হাসপাতালের পরিচালক রয়ে গেছেন, যেখানে প্রায় অন্য সবগুলো হাসপাতালই ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এতদিন চুপচাপ থেকে এখন আবার দীন মোহাম্মদ স্বাচিপের চিকিৎসকদের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনছেন এবং গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের চিকিৎসকদের সঙ্গে নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে আজ চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি ছিল, সেখানে পরিচালক চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও আউটসোর্সিংয়ের লোকদের দিয়ে হামলা করিয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক আহত হয়েছেন। এমনকি তারা আমাদের আরও কয়েকজন চিকিৎসককে রুমে আটকে রেখেছেন। আমরা এই ফ্যাসিস্ট দীন মোহাম্মদ ও জয়েন্ট ডিরেক্টর বদরুলের পদত্যাগ চাই।

আরেক চিকিৎসক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর তার অনুগত কয়েকজন চিকিৎসককে হাসপাতাল থেকে বদলি করে দেওয়া হলেও সেই সময়ে পরিচালক দীন মোহাম্মদ নিজেকে ছাত্রদের পক্ষের পরিচয় দিয়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় লবিং করে টিকে যান। এবার তিনি তার পুরোনো রূপ দেখাতে শুরু করেছেন। স্বাচিপের লোকদের তিনি আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনছেন।

তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) যখন স্বাচিপ নেতা ডা. গুরুদাস মন্ডলকে ফিরিয়ে আনার অর্ডার অন্য সাধারণ চিকিৎসকদের নজরে আসে, তখন ড্যাব-এনডিএফ এবং বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক সমাজ পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানে হট্টগোল হয়। এরপর ৪০২ নম্বর রুমে আজ চিকিৎসকরা মিলিত হয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। এরপর পরিচালকের নির্দেশে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা আউটডোর বন্ধ করে দিয়ে ৪০২ নম্বরের সামনে জড়ো হয়ে হৈচৈ শুরু করে। এসময় তারা নিনস ড্যাবের সেক্রেটারি ডা. জালালুদ্দিন রুমিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আহত হন।

চিকিৎসকদের দাবি, আওয়ামী লীগের সময়ে এই পরিচালক দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন। বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। স্বৈরাচার হাসিনার দোসর এ চিকিৎসক আর হাসপাতালের পরিচালক থাকতে পারেন না। তাই সব চিকিৎসক মিলে দীন মোহাম্মদ ও তার সব অপকর্মের সহযোগী ডা. বদরুলের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তবে এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে অধ্যাপক দীন মোহাম্মদকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। নিয়মিত বিরতিতে দেওয়া তৃতীয়বারের কলটি কেটে দেন তিনি।