৭ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:সোমবার, ১৭ ফেব্রু ২০২৫ ০২:০২
চাকরির পেছনে না ছুটে বরং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার দক্ষতা অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন ইলিনয়স স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিসটিংগুইসড প্রফেসর ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া গোটা বিশ্বকে বাজারে পরিণত করে একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে পঞ্চম শিল্পবিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। চাকরির বাজার এখন নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পঞ্চম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘ চার বছর কঠোর অধ্যবসায়, নিরলস পরিশ্রম ও গভীর একাগ্রতা নিয়ে অধ্যয়ন শেষে তোমরা আজ তোমাদের স্বপ্নের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছো। এতদিন তোমরা জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত ছিলে। বিশ্বমানের শিক্ষায় তোমরা নিজেদের সমৃদ্ধ করেছো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যে জগতের সঙ্গে তোমাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেনি। এখন সেটা ঘটবে। তোমরা এখন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। এর বাঁকে বাঁকে রয়েছে ঝুঁকি। অনেক অনিশ্চয়তা। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে এখান থেকে যে জ্ঞান, মূল্যবোধ ও দক্ষতা অর্জন করেছো, তা দিয়েই তোমরা সেইসব অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করে আনবে দেশ ও দশের জন্য কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
তিনি বলেন, তোমরা গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিত্ব করবে দেশে-বিদেশে। তোমরা সংকীর্ণতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির ঊর্ধ্বে উঠে পরিণত হবে বিশ্ব নাগরিকে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরাই দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানুষকে আশার বাণী শোনাবে। মুক্তির গান গাইবে। তোমাদের মধ্যে আছে ভবিষ্যতের সব বড় বড় বিজ্ঞানী, দার্শনিক, স্থপতি, আইনজ্ঞ, চিন্তক যারা কাঁধে কাঁধ রেখে গণতন্ত্র, সাম্য ও ঐক্যের মন্ত্র বলে জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার কোনও শেষ নেই। এটি কোনো বস্তু নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। শেখার মনোভঙ্গি মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করে এবং তাকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করে। আবার এই শিক্ষা শুধু নিরেট বিজ্ঞান শিক্ষা বা দর্শন শিক্ষা নয়। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারও বটে। যে শিক্ষার সঙ্গে মানবিকতার সম্মিলন ঘটে না, সেই শিক্ষা মানব সভ্যতার কোনও উপকারে আসে না। তাই, তোমাদের নিজ নিজ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষা লাভের পাশাপাশি নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সবার মানুষ হয়ে ওঠার সদিচ্ছাই পারে আমাদের দেশ থেকে সব ধরনের অন্যায়, শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনা, অশিক্ষা ও অজ্ঞতা দূর করতে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরাই পারবে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে বাংলাদেশকে সুখ, সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতার পথে পরিচালিত করতে।
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। সাইবার প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট-রোবটিক্স মানুষের সক্ষমতাকে অনবরত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। সংস্কৃতির আন্তঃগ্রন্থিকতা বা মাল্টিকালচারালিজম এখন বিশ্বে আমাদের অবস্থান ও তার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মপরিচয়ের সংজ্ঞাকে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে। রাজনীতি, বিশ্বাস ব্যবস্থা, শিল্প-সাহিত্য, নন্দন ও সংস্কৃতির গায়ে নতুন নতুন অভিঘাত প্রতিনিয়ত আছড়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় তোমাদেরকে এই চ্যালেঞ্জসমূহ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে বদলাতে চাইলে প্রথমে নিজেকেই বদলাতে হবে বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য রাখেন- গ্রিন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১