১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:শুক্রবার, ২৮ ফেব্রু ২০২৫ ০১:০২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. আনু মোহাম্মদ বলেছেন, যদি সত্যি ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকত, তবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাগুলো বাংলায় রচিত হতো, জনগণের জানার সুযোগ থাকত। অথচ আজও শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রশাসনের নীতিনির্ধারণ পর্যন্ত, সবক্ষেত্রে ইংরেজির আধিপত্য।
তিনি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে, বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে ভাষার জন্য এত সংগ্রাম, এত আত্মত্যাগ, সবই অর্থহীন হয়ে যাবে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলন ও মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী সকল দলিল, পরিকল্পনা, এমনকি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও ইংরেজিতে প্রণীত হয়। নদ-নদী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি কিংবা স্বাস্থ্য খাত, সবক্ষেত্রেই সরকার যে নীতি নির্ধারণ করে, তা ইংরেজিতে রচিত হয়, ফলে জনগণের সঙ্গে এর সংযোগ তৈরি হয় না। জনগণ জানেই না, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা হচ্ছে, কী পরিবর্তন আসতে চলেছে। এটি জ্ঞানের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করছে, যা প্রকৃত অর্থে জনগণকে রাষ্ট্রের মূল চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলা ভাষার অবহেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার বেশিরভাগ রেফারেন্স বই ইংরেজিতে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভাষার জন্য আলাদা পরিশ্রম করতে হয়, যা তাদের জ্ঞানের সঙ্গে প্রকৃত সংযোগ স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে। মাতৃভাষায় শিক্ষার যে সুবিধা থাকার কথা, তা উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ সত্যেন বসু, জগদীশ চন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সবাই একবাক্যে বলেছেন, মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞানার্জন সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, অন্য অনেক দেশ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা তাদের মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করেছে, ফলে তাদের জনগণের জ্ঞানচর্চা সহজ হয়েছে, উন্নতির পথ সুগম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই সঠিক পথ নির্ধারণ হয়নি। বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো আমাদেরও উচিত বাংলা ভাষায় জ্ঞানচর্চার সুযোগ তৈরি করা, আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলোর অনুবাদ করা এবং রাষ্ট্রের সকল নীতিনির্ধারণী দলিল বাংলায় প্রকাশ করা।
তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীসহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ফলে ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার অধিকার নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ তৈরি করেছিল। ভাষা আন্দোলনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়, যুক্তফ্রন্টের উত্থান ঘটে, এবং পরবর্তী সময়ে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয়। অথচ এত সংগ্রামের পরও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান আজও প্রশ্নবিদ্ধ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১