১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মার্চ, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫ ০৩:০৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাগবিতণ্ডা, উচ্চবাচ্যসহ সাংবাদিকদের কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সূত্রে জানা গেছে, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ বিএনপিপন্থি এক কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার বানানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মধ্যে থেকে রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। এই নিয়েই মূলত হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এদিকে হট্টগোলের সময় সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে গেলে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে বাধা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। এ সময় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক পদ থেকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অপসারণের দাবিতে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। তাদের দাবির মুখে একপর্যায়ে প্রশাসন পরিকল্পনা পরিচালক ড. নওয়াব আলীকে (আওয়ামীপন্থি) সভাকক্ষ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি সভাও স্থগিত করা হয়।
পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী, জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জান খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যলয়ে ঢোকেন। এ সময় সাংবাদিকরা সেখানে প্রবেশ করলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সদস্য নুর উদ্দিন, রাফিজ আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, আলিনুর রহমান, উল্লাস মাহমুদ ও সাবিক জোয়ার্দারসহ অন্যান্য কর্মীরা তাদের বের করে দেন।
এর একপর্যায়ে হঠাৎ রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় কক্ষের মধ্যে উচ্চবাচ্য শুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদেরকে বাধা দেয়। পরে তাদেরকে উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
হট্টগোলের একপর্যায়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানকে ‘জামায়াত’ বলে আখ্যা দিলে দুজনের মধ্যে উচ্চবাচ্য সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ প্রক্টরের। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট বলেন, আগে দেখতাম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পদ ভাগাভাগি নিয়ে হট্টগোল, প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতো। এখন ছাত্রদল একই পথে হাঁটছে। এ রকম অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি নতুন বাংলাদেশে মোটেই কাম্য নয়। আজকের এই ঘটনা চরম লজ্জাজনক। আমরা ঘটনায় জড়িত দোষীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এর মধ্যে বিচার না করলে শিক্ষার্থীরা অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
ইবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, প্রোভিসি, আহ্বায়ক শাহেদ, সদস্য সচিব মিথুন তাদের ব্যক্তিস্বার্থে পিকুলকে রেজিস্ট্রার বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা চাই জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের যোগ্য একজন ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রার বানানো হোক। আর সাংবাদিকদের সাথে নিজ দলের কর্মীদের চেয়েও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের এমন আচরণের দায় ছাত্রদল নেবে না।
এ বিষয়ে ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, উপাচার্যের কার্যালয়ে এক জুনিয়র শিক্ষক আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। উপাচার্য এর বিচার না করলে আমি বিষয়টি অন্যভাবে দেখবো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, উপাচার্যের কার্যালয়ে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। যেহেতু শিক্ষকদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে সেহেতু আমরা উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেব। এ বিষয় নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটির দরকার নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১