ম্যারাডোনার ৭ চিকিৎসকের বিচার শুরু, কেমন শাস্তি হতে পারে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ০৪:০৩

ম্যারাডোনার ৭ চিকিৎসকের বিচার শুরু, কেমন শাস্তি হতে পারে

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা ফুটবলবিশ্বকে শোকের সাগরে ফেলে চিরবিদায় নিয়েছেন ৪ বছর আগে। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তার, এরপর সুস্থ হওয়ার পথেই ছিলেন। সেই অবস্থায় তার মৃত্যু রহস্যের জন্ম দেয়। ম্যারাডোনার প্রয়াণের ৪ বছর পর তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ৮ জনের মধ্যে সাতজনেরই বিচার শুরু হয়েছে। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আজ (মঙ্গলবার) আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের এক আদালতে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে এই কিংবদন্তি ফুটবলার মেডিক্যাল টিম দ্বারা ‘অযথার্থ, ত্রুটিপূর্ণ এবং বেপরোয়া আচরণে’র শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ম্যারাডোনা তাদের অধীনে থাকাবস্থায় যথাযথ নিয়ম ও প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলেও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
https://twitter.com/AP?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1899188790578524294%7Ctwgr%5E385cb0925964ac65fe2d170b96059803c7393f8e%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.dhakapost.com%2Fsports%2F350233
১৯৮৬ বিশ্বকাপে প্রায় একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। এরপর দুনিয়াব্যাপী তার বিপুল জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। এমনকি সর্বকালের সেরা ফুটবলার বিতর্কেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন জীবদ্দশা থেকে। এখনও পেলে ও ম্যারাডোনার মাঝে কে সেরা নানা উপলক্ষ্যে সেই আলোচনা ওঠে। এদিকে, কোকেইন ও অ্যালকোহল আসক্তির দীর্ঘদিন ধরেই নানান সমস্যায় ভুগছিলেন ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুতে সেসবের প্রভাব থাকলেও চিকিৎসকদের কর্মকাণ্ডেরও বড় ভূমিকা দেখছেন বিশ্লেষকরা। অভিযুক্ত সাত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলা প্রমাণ হলে তারা ৮ থেকে ২৫ বছরের কারাবাসের শাস্তি পেতে পারেন।

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিচারের এই শুনানি আগামী জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে জানা গেছে। লাতিন ও ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বুয়েন্স আয়ার্সের সান ইসিদ্রো শহরে দীর্ঘ বিলম্বিত বিচারে ম্যারাডোনার পরিবারের সদস্য এবং বছরের পর বছর তার চিকিৎসা করা ডাক্তারসহ ১০০ জনেরও বেশি সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ম্যারাডোনার নার্স দাহিয়ানা জিসেলা মাদ্রিদের বিচার হচ্ছে আলাদাভাবে। গত বছরের অক্টোবরে তাকে প্রাথমিক শুনানির মুখোমুখি করা হয়, যা নিয়ে এখনও রায় আসেনি। যদিও অভিযুক্ত প্রত্যেকেই ম্যারাডোনার মৃত্যুতে নিজেদের দায় থাকার কথা অস্বীকার করে আসছেন।

ম্যারাডোনার মৃত্যুতে অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হচ্ছেন– নিউরোসার্জন লিওপোল্ডো লুক, মনোবিদ আগুস্টিনা কোসাশভ, মনোবিজ্ঞানী কার্লোস দিয়াজ, হোমকেয়ার সমন্বয়ে থাকা চিকিৎসক ন্যান্সি ফোরলিনি, নার্সিং সমন্বয়ক মারিয়ানো পেরোনি, নার্স রিকার্ডো ওমর আলমিরন, নার্স দাহিয়ানা জিসেলা ও পদার্থবিদ পেদ্রো ডি স্পাগনা। এর মধ্যে নিউরোসার্জন লিওপোল্ডো মাথায় অস্ত্রোপচার করেন ম্যারাডোনার। তবে দ্রুত সময়েই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ায় তিনি প্রশ্নের মুখে পড়েন। এ ছাড়া মনোবিদ আগুস্টিনার দেওয়া ওষুধপত্র অনুসারে চলছিল এই কিংবদন্তির নিরাময় ব্যবস্থা। মৃত্যুর পর ম্যারাডোনাকে হতাশা কাটানোসহ নানা কারণে অবৈধ ওষুধ সেবন করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সবমিলিয়ে ম্যারাডোনার মৃত্যুতে চিকিৎসকদের জড়িত থাকার কথা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল। ২০২২ সালে মামলা দায়েরের পর প্রসিকিউটর ও বিচারকরা তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আবেদন করেছিলেন। তারও দুই বছর পর সেই শুনানি শুরু হলো। এর আগে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে তিনি মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের পরে বাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয় বিশ্বজুড়ে। এরপর তার চিকিৎসকসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।

পরে ওই আট চিকিৎসক আদালতে হাজির হয়ে নিজেদেরকে নিরাপরাধ দাবি করেন। তখন প্রসিকিউটররা ম্যারাডোনাকে ‘অবহেলা’ ও চিকিৎসায় ‘ঘাটতি’র অভিযোগ তোলেন। সেইসঙ্গে ২০২১ সালে ২০ জন বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। যেখানে আট চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, যদি ভালো চিকিৎসা দেওয়া হতো তাহলে ম্যারাডোনা হয়তো বেঁচে থাকতেন।