১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মার্চ, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ ১২:০৩
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলা থেকে আওয়ামী লীগের এক নেত্রীকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অমিত বণিক নামে এক ব্যবসায়ী। অমিত আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় থানায় বাদীকে মারধর এবং গুলি করার চেস্টার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে খোদ পুলিশ।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যাচেষ্টা মামলার (নম্বর-১২, তারিখ ২৩-১১-২০২৪) আসামি রংপুর মহানগরীর নিউ সেনপাড়ার বাসিন্দা লিপি ভরসা নামে আওয়ামী লীগের এক নেত্রী। নগরীর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক ব্যবসায়ী অমিত বণিক নিজেকে পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা আছে উল্লেখ করে তাকে সেই মামলা থেকে নাম কাটা ও সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে লিপি ভরসার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চান। এ সংক্রান্ত একটি অডিও কল ভাইরাল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অমিত বণিকের নামে লিপি ভরসার ম্যানেজার পলাশ হাসান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) একটি চাঁদাবাজির মামলা (নম্বর-১৫) দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর এবং কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করার চেষ্টা এবং একজন পরিদর্শক পদবির কর্মকর্তার ওপর হাততোলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সে প্রতিবেদনও জমা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় পুরো থানাজুড়ে ফোর্সদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স সূত্র জানিয়েছে, এর আগে রংপুরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে হামলায় গুরুতর আহত রংপুরের জিয়া মঞ্চের নেতা লুসার আহমেদ ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আসামি করে মামলা দিলে ওই কর্মকর্তা নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে তার নাম কেটে দেন। এ সময় একজন বিএনপি নেতা নাম কাটার বিরোধিতা করলে উল্টো ওই নেতাকেই মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানোর জন্য ওসিকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির সার্কেল এসপি থাকাকালীন সময়ে সেই সময়কার পুলিশ সুপারকে (এসপি) থাপ্পড় মারার অভিযোগে বিভাগীয় প্রসেডিং হয়েছিল। এছাড়া একজন ডিআইজির সঙ্গেও অপেশাদার আচরণের কারণে প্রসেডিং হয়েছিল। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে সুসম্পর্কের জেরে ওই দুটি প্রসেডিং উৎরাতেও সক্ষম হন তিনি এবং বিষয়টি জোড় গলায় বলে বেড়ান।
তদন্ত সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছিল বিএনপি জামায়াত এবং শিক্ষার্থীদের নামে। ৫ আগস্টের পর সেই মামলাগুলো পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ওই কর্মকর্তা তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। সেই সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার তাকে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে বললেও তিনি তাদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেন। এসব বিষয়গুলোও তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হাবিবুর রহমান জানান, থানায় বাদীকে মারধর, গুলি করার চেস্টার বিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে এবং বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এক আদেশে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে প্রত্যাহার করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) পদে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, লিপিখান ভরসা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। সেই আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া এবং তাকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে পুলিশের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন ব্যবসায়ী অমিত বণিক। এ বিষয়ে অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অমিত বণিকের নামে চাঁদাবাজির মামলা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, অমিত বণিকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে অর্থ জোগান দেওয়া এবং আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার অভিযোগও আছে। এছাড়া মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মজিদ আলী আরও জানান, লিপিখান ভরসা অবৈধ সুবিধা নেওয়ার জন্য যোগসাজশ করেছে। সে কারণেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১