১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ১২ নভে ২০২৪ ০২:১১
কুষ্টিয়ায় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে আমেনা খাতুন নামে এক তরুণী পালিয়ে গেছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও ওই তরুণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তা ছাড়াও পুনর্বাসনকেন্দ্রটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিবাসীদের নির্যাতনের অভিযোগে উঠেছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে আমেনা খাতুন সেখান থেকে পালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রশাসন, পুলিশ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। এ ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রটি কুষ্টিয়ার বটতৈল এলাকায় অবস্থিত। এখানে ১০০ জন নিবাসী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বর্তমানে আছে ২৭ জন। নিম্নমানের খাবার দেওয়া, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিশুদের নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের ম্যানেজার নাজনীন নাহার বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে আমেনা খাতুন নামের সামাজিক প্রতিবন্ধী তরুণী আমাদের কেন্দ্রে থাকে। সে দিনাজপুরের একটি সেভ হোম থেকে আসে। ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাসা ও মা-বাবার ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছোটবেলায় হয়তো হারিয়ে গিয়েছিল। সে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। তার পালিয়ে যাওয়ার কথা না। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমানাপ্রাচীর টপকে পালিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া ওই তরুণীর সন্ধানে পুলিশের পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। আমরা সবসময় ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করি। কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্যাতনের ঘটনা এখানে ঘটেনি। দুর্নীতি, অনিয়ম ও নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এদিকে কুষ্টিয়া সরকারি বালক শিশু পরিবারে (এতিমখানা) নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান হোসেন রিজভী (১২) নামের এক শিশু গত ২ নভেম্বর পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পালিয়ে যাওয়া ওই নিবাসীর কোনো সন্ধান মেলেনি। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার (৯ নভেম্বর) তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সামাজিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের মেয়েরা অভিযোগ করে বলে, সরকারিভাবে দৈনিক খাবার তালিকায় যে খাবার সরবরাহের কথা, তা খেতে দেওয়া হয় না। বিপরীতে নিম্নমানের খাবার অল্প পরিমাণে দেওয়া হয়। ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। দীর্ঘদিন সেখানে থাকার পরও পুনর্বাসন করা হয় না। তালিকা অনুযায়ী মাছ ও মাংস খেতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিন মোটা চালের ভাত, সবজি ও পাতলা ডাল রান্না করে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যেই নির্যাতন করা হয়৷
তারা আরও বলে, প্রতিবাদ করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। ম্যাডাম ও স্যাররা আমাদের জন্য সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী সরবরাহ করা মালামাল দেন না। তারা অনিয়ম দুর্নীতি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। আমাদের দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য করেন। না করলে আমাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, মারধর ও নির্যাতন করা হয়। তাদের নির্যাতনে এখান থেকে আমেনা খাতুন পালিয়েছে। সে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। আমরা জড়িতদের পদত্যাগ ও শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, আমেনা খাতুন নামের এক নিবাসী পালিয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের অভিযোগটিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, শিশু পরিবার থেকে রিজভী এবং সামাজিক প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে আমেনা খাতুন নামের দুই নিবাসী পালিয়েছে। তারা দুজনই বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাদের খুঁজে পেতে কাজ করছে পুলিশ। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, তরুণী নিবাসী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের অভিযোগটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার বটতৈলে ১.০৫ একর জমির ওপর ২ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালে নির্মিত হয় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র। ছয়টি বিভাগীয় পর্যায়ের ছয়টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের মধ্যে খুলনা বিভাগীয় পুনর্বাসনকেন্দ্রটি কুষ্টিয়ার বটতৈলে স্থাপিত হয়। ১০০ জনের জন্য এ পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে ৩ হাজার বর্গফুটের একটি অফিস, প্রশিক্ষণ ও স্কুল ভবন, একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, ৮ হাজার বর্গফুটের দ্বিতল ডরমিটরি ভবন, ১ হাজার বর্গফুটের ২ ইউনিট স্টাফ কোয়ার্টার ও ৮০০ বর্গফুটের ২ ইউনিট স্টাফ কোয়ার্টার, ৬৭২ বর্গফুটের ওয়ার্ডার্স ব্যারাক ও পাম্প হাউজ এবং ১ হাজার ৩৭০ ফুট বিস্তৃত সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সামাজিক প্রতিবন্ধী তরুণীদের বিভিন্ন অনৈতিক, ঘৃণিত ও বিপজ্জনক পেশা হতে উদ্ধার করে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা, নৈতিক সংশোধন, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এ পুনর্বাসনকেন্দ্রের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
সমাজের বিপথগামী মেয়েদের এনে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করা, মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অন্ন-বস্ত্র সরবরাহ, সংশোধনী, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে মানসিক ও মনস্তাত্বিক উৎকর্ষ সাধন এবং একই সঙ্গে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই বুদ্ধি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১