মোদির সমালোচনা করায় বহিষ্কার, কৃষ্ণনগর থেকে জয় পেলেন সেই মহুয়া

প্রকাশিত:মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪ ০১:০৬

মোদির সমালোচনা করায় বহিষ্কার, কৃষ্ণনগর থেকে জয় পেলেন সেই মহুয়া

নিউজ ডেস্ক: মঙ্গলবার (৪ জুন) কৃষ্ণনগর থেকে জয়ী হয়েছেন মহুয়া। জয় ঘোষণার পরেই তিনি বলেন, নিজের জয়ের থেকেও বেশি খুশি, বিজেপি নামক এই অশুভ শক্তি, মোদির মতো অযোগ্য প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারতে রাজ করেছেন ১০ বছর, তার বিরুদ্ধে আজকের ভোট হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কুর্নিশ জানাই।

মহুয়া একা নন, বিরোধীদের কণ্ঠে একই সুর। তাদের দাবি, ‘মোদি ম্যাজিক’-এ ধস নেমেছে। এক দশক পরে আবার একদলীয় শাসনের ইতি হতে চলেছে ভারতে। সেই সঙ্গে অষ্টাদশ লোকসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরতে চলেছে বিরোধী দলনেতার পদ। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ভোটের ফলের প্রবণতা এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। তবে ভোট গণনার প্রবণতা বলছে ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না তার দল বিজেপি।

‘৪০০ পার’ দূর, আড়াইশো পার করাও কঠিন হতে চলেছে বিজেপির। ৫৪৫ আসনের (দু’টি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। প্রবণতা অনুযায়ী বিজেপির দৌড় দেড়শোর আগেই থেমে যেতে পারে।


একটি বিষয় স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী হলেও আগের মতো আর ‘শক্তিশালী’ হবে না মোদি সরকার। কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য মোদিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএর দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউয়ের ওপর।

এই সুযোগটাই কী সংসদে আসন্ন অধিবেশনগুলোতে আরও বেশি করে নেবেন মহুয়া? ঝাঁজ বৃদ্ধি পাবে তার হুংকারের?

আগেও আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ‘যোগসাজশ’ রয়েছে দাবি করে অভিযোগ ছড়িয়েছিলেন মহুয়া। পরে তার সংসদ সদস্য পদ যখন খারিজের সুপারিশ করে রিপোর্ট দিয়েছিল সংসদীয় কমিটি, তখন আরও জোরালো হুংকার করেছিলেন মহুয়া। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, মোদি ও আদানির ‘শেষ’ দেখে ছাড়বেন।

বিলিওনিয়ার গৌতম আদানিকে সম্বোধন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহুয়া লিখেছিলেন, মিস্টার আদানি, মহুয়ার টিকিট কাটা যাবে এ কথা সবাইকে বলে নিজের সময় নষ্ট করবেন না। আমি কৃষ্ণনগর থেকেই দাঁড়াব, আমার জয়ের ব্যবধান দ্বিগুণ হবে। ব্যবধান গতবারের থেকে কমলেও তিনি জয়ী হয়েছেন।

মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতারাও দাবি করেছিলেন, আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল বলেই ‘এথিক্স কমিটি এতটা তৎপর’। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী সরব হন।

ইয়েচুরি বলেছিলেন, কে কাকে কী উপহার দিয়েছেন, এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগ এথিক্স কমিটির কাছে আছে। হঠাৎ করে একটি মামলার তদন্তে কেন তৎপর হল এথিক্স কমিটি? কারণ আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাকিরা কী উপহার নেন না?

বিজেপির বিদায়ী সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ ছিল যে, গৌতম আদানি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইঙ্গিত করে সংসদে প্রশ্ন করার জন্য শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে নগদ টাকা ও দামি উপহার নিয়েছেন মহুয়া।

এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছিলেন নিশিকান্ত। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছেন মহুয়া। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন।

একই অভিযোগ জানিয়ে সিবিআই প্রধানকে চিঠি লিখেছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। মহুয়া পাল্টা দাবি করেন যে, সমস্ত সাংসদের লগ ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড কবে কোথা থেকে ব্যবহার হয়েছে, তা প্রকাশ করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, আরও কেউ ওই একই কাজ করেন কি না।

অভিযোগের ভিত্তিতে মহুয়ার সংসদ সদস্য পদ খারিজ করে দেওয়া হয় গত ৮ ডিসেম্বর। স্পিকার ওম বিড়লা জানান, লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট মেনেই এই সিদ্ধান্ত। বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের কথা না শুনেই এমপি পদ খারিজ করা হয়েছে মহুয়ার। তাকে সংসদে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূল নেত্রী।

এই আবহে মহুয়াকে আবার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে প্রার্থী করে তৃণমূল। বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী করে কৃষ্ণনগরের ‘রানিমা’ অমৃতা রায়কে। আসনটি যে সহজ নয়, তা ফোন করে অমৃতাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন খোদ মোদি।

মহুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে নিজে এসে দু’বার সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ভোট ঘোষণার আগে একটি ও পরে একটি। এ নিয়ে নদিয়ার তেহট্টে গিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বলেছিলেন, আবার মিথ্যা বলতে আসছেন মহুয়ার এখানে। কারণ, মহুয়াকে নিয়ে ওদের খুব জ্বালা। মহুয়া যে মুখের ওপর কথা বলে দেয়, ভয় পায় না। মহুয়া বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করে। ও সবাইকে বলে দিয়েছিল দেশে কী চলছে। তাতে কী রাগ। আসলে কেঁচো খুঁড়তে গেলে তো দিল্লির নেতাদের সাপ বেরিয়ে যাবে।

সেই ‘বাঘের বাচ্চা’-র মতো লড়াই করতেই আবার সংসদে যাচ্ছেন মহুয়া। ‘দুর্বল’ প্রতিপক্ষের সামনে আরও জোরালো হবে আক্রমণ!