স্বর্ণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে কোন কারণ?

প্রকাশিত:শুক্রবার, ০৬ ডিসে ২০২৪ ১১:১২

স্বর্ণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে কোন কারণ?

ঐতিহাসিক কাল থেকে স্বর্ণের বাজার বরাবরই চড়া; তবে চলতি ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে স্বর্ণের দাম, ভেঙে দিয়েছে একের পর এক রেকর্ড। নিকট বা দূর অতীতে কোনো বছর স্বর্ণের বাজারের এমন বেলাগাম পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি।

স্বর্ণের দামের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনীতির সম্পর্ক বেশ নিবিড়। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয় এবং তার সঙ্গে যোগ হয় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই স্বর্ণের বাজারও চড়তে থাকে। তবে চলতি বছর যে হারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তার জন্য আরও একাধিক কারণ দায়ী বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজার বিশ্লেষকরা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এর কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিল। ‘হু ইস বিহাইন্ড গোল্ড’স ক্রেজি রাইস’ বা ‘স্বর্ণের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিল নেপথ্যে কে’ নামের একটি তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছে ব্লুমবার্গ।

এই অনুসন্ধানে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রথম কারণ হিসেবে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে শাস্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর রুশ অর্থ ও সম্পদ জব্দ করার ব্যাপারটি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ছিল রাশিয়ার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এসব অর্থ ও সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো। রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এসব পদক্ষেপের জেরে বিশ্ব অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে আক্ষরিক অর্থেই বিপদঘণ্টা বেজে ওঠে এবং শুরু হয় বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান বাহন ডলারের মানে অস্থিতিশীলতা। বস্তুত, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত কখনও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে ডলারের দাম, কখনও বা কমছে।

এর ফলে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পড়েছে সমস্যায়। সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি রোধ করতে তাই ২০২২ সাল থেকেই অধিক হারে স্বর্ণ কিনছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ পৃথিবীতে যেহেতু স্বর্ণের মোট পরিমাণ সীমিত, তাই স্বর্ণের মজুত থাকলে তার বিপরীতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। ফলে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও।

স্বর্ণের দামবৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণটি হলো চীন। করোনা মহামারি ও তার জেরে মাসের পর মাস ধরে শিল্প ও কৃষি উৎপাদনের স্থবিরতা দেশটিকে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে ফেলেছিল। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে চিনের ধনী-শিল্পপতিদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও ২০২৪ সালে স্বর্ণ ক্রয়ের ধুম পরিলক্ষিত হয়েছে।

ব্লুমবার্গের মতে, বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের বাজারের অতিমাত্রায় চাঙ্গাভাবের প্রধান কারণ এ দুটি।