‘জুলাই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে’

প্রকাশিত:শনিবার, ১১ জানু ২০২৫ ০৩:০১

‘জুলাই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিতে বিভিন্ন মহলের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আগের মতো রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে যেন জনগণের বৃহত্তর স্বার্থ এবার পরাভূত না হয়। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি আয়োজিত দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হান্নান আহমেদ খান বাবলুর স্মরণসভায় এসব কথা বলে তিনি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বার বার আমরা লড়াই করেছি কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আমাদের বিজয় ছিনতাই হয়ে গেছে। আজ খুব কষ্ট লাগে, ৫ তারিখে যে পরিবর্তনটা হলো তার কয়েকটা মাস গেছে মাত্র। এর মধ্যেই কে এই বিজয়ের দাবিদার তা নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এত বড় বিজয় সবাই ভাগ করে নিলেও তো একেকজনের ভাগে অনেক বড় ভাগ পড়বে। কেউ জোর করে একা এই বিজয়ের কৃতিত্ব কাঁধে নিতে চাইলে তার কাঁধ ভেঙে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, গত ১৫ বছরে যারা খুন, গুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা সবাই এই বিজয়ের অংশীদার। এখানে ছাত্র আছে, শ্রমিক আছে, এটা সবার। সবাই মিলে এই আন্দোলনে অর্জিত যে বিজয় তা জনগণের কল্যাণে নিয়ে যাওয়ার সময় এখন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকে দাবি করছেন, তারাই জানেন কীসে জনগণের কল্যাণ। মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেকেই এমন করার চেষ্টা করেছে। অনেকে যারা যুদ্ধেই যায় নাই, হোটেল-রেস্টুরেন্টে থাকতে দেখেছি, শুনেছি, তারা আমাদের শেখাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে, এখন এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটা সৌহার্দ্য এর গণতন্ত্র, প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সবাই নির্ভয়ে তাদের ভোট দেবেন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সরকার গঠন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সঠিক ভোটার তালিকা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন কোনোটাই সম্ভব না। যদি সেটা (ভোটার তালিকা) হয়ে যায় তাহলে সংসদ নির্বাচনে বাধা কোথায়? কারো কারো স্বার্থ আছে।’

সামগ্রিক সংকট মোকাবিলা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একেবারে পরিপূর্ণ সফল হয়ে যাবে, এমনটা হবে না। তারা তো রাজনীতিবিদ না। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল, যোগ্য মানুষ তাতে সন্দেহ নেই। তারা এত কিছু পারবে না। তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তারা পারবে রাজনীতিবিদ তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে লড়াই করছি, আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। আমরা নতুন কর্মসূচি নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামব।’

তিনি বলেন, ‘হাসিনা পালিয়ে গেছে কিন্তু হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে আছে এবং ষড়যন্ত্র করছে। দেশের গণতান্ত্রিক লড়াই এখনো শেষ হয় নাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন কার প্রয়োজনে? কি জন্যে? এগুলো ষড়যন্ত্র। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন নতুন নতুন আওয়াজ তোলা হচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে নাকি ভারত আর আমেরিকা একসঙ্গে কাজ করবে। কেন করবে? বাস্তবিকভাবে তাই হতে যাচ্ছে। এ সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করে, ছল-চাতুরি করে নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হান্নান আহমেদ খানকে ছোট ভাইয়ের মতো ভালোবাসতাম। ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনের ফলে তার নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল থাকব। বাবলুর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় নাই। বাংলাদেশের সংকটের সমাধান হয় নাই।’