৪ঠা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে আগস্ট, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪ ১০:০৬
নিউজ ডেস্ক: ১৮ ঘণ্টা পার হলেও কর্ণফুলী নদীতে তলিয়ে যাওয়া আশরাফ উদ্দিনের (৫৩) খোঁজ মেলেনি। চট্টগ্রাম পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর পরিচালক আশরাফের খোঁজে নদীতে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। আজ রোববার সকাল থেকে নদীর বিভিন্ন অংশে অভিযান চালায় ডুবুরি দল।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাটের ফেরিঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রবল স্রোতে যাত্রীবাহী একটি নৌকার থেমে থাকা ফেরির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নৌকায় থাকা আশরাফ উদ্দিনসহ দুজন পানিতে পড়ে যান। অন্যজন সাঁতরে উঠে আসতে পারলেও আশরাফ নদীতে তলিয়ে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। আশরাফের আত্মীয়স্বজনেরাও আসেন নদীর পাড়ে।
মাত্র ৪১ দিন আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান আশরাফ উদ্দিনের মা দিলোয়ারা বেগম। অল্প সময়ের ব্যবধানে আশরাফের এমন পরিণতি তাঁদের বেদনা ও শোককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগের দিন শুক্রবার মায়ের মৃত্যুর ৪০ দিন–পরবর্তী ধর্মীয় আচার পালন করেছিলেন আশরাফ।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডীর শেখপাড়ার বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর প্রয়াত হাবিবুর রহমানের ছেলে আশরাফ উদ্দিন। তিনি দুই সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট মেয়ে একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
আজ রোববারও সকাল থেকে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশরাফ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আবদুল মজিদ। নদীর যেখানে পড়ে যান ঠিক তার পাশেই আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন।
নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পর সময় যত পার হয়েছে আশা তত ক্ষীণ হয়েছে তাঁদের। এখন আশরাফকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। শুধু আকুতি মরদেহটা যেন পান।
ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবদুল মজিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়ের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন লাশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে আশরাফের স্ত্রী-সন্তানেরা অপেক্ষায় আছে লাশের। দোয়া করেন অন্তত লাশটি যেন পাই।’
ভাইয়ের খোঁজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠে পড়েন আবদুল মজিদ। নৌকায় করে নদীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে দেখেন, কিন্তু বিফল চেষ্টা। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন স্বজনেরা। সেটাই জানালেন আশরাফ উদ্দিনের স্ত্রীর বড় ভাই স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন। এখনো খুঁজছেন। আশরাফের এমন পরিণতি মেনে নেওয়া তাঁদের জন্য খুবই কষ্টকর। আশরাফ নিজেই নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের নৌকার পরিবর্তে ফেরি ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন, যাতে কোনো দুর্ঘটনায় না পড়েন। কিন্তু তিনি নিজেই কী মনে করে নৌকায় উঠতে গেলেন তা বুঝতে পারছেন না৷
এদিকে আশরাফ উদ্দিনের খোঁজে নদীর কালুরঘাট থেকে নতুন ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত আট কিলোমিটার অংশে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রামের কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নদীর ভাটির অংশে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এখন উজানের দিকে খোঁজ করবেন।
সংস্কারকাজের জন্য চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে সেতুর পাশে ফেরি চালু করা হয়েছে। তবে ফেরির পাশাপাশি মানুষ নৌকায় করেও পারাপার হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১