চিরকুটে লেখা ‘আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে’, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল তরুণীর দেহ

প্রকাশিত:শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪ ০১:০৬

চিরকুটে লেখা ‘আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে’, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল তরুণীর দেহ

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের পটিয়ায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম রীমা আক্তার (২০)। তিনি উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের হীরা গাজী তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পটিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রীমা।

আজ শুক্রবার রীমা আক্তারের বিয়ে এবং গতকাল গায়েহলুদের সময় নির্ধারণ করা ছিল। বিয়ে উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে বাড়িতে সাজসজ্জাসহ প্রস্তুতিও শুরু হয়।

রীমার বোন রুমি আকতার বলেন, বেলা ১১টার দিকে রীমা বর মোরশেদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। এ সময় মোরশেদের পরিবার থেকে আসবাবপত্র যৌতুক চাওয়ার বিষয়ে দুজনের ঝগড়া হয়। এরপর নিজ কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন রীমা। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর তাঁর সাড়াশব্দ না পেয়ে ভেন্টিলেটরে উঁকি দিয়ে দেখা যায়, তাঁর শরীর ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে।

রুমি আকতার আরও বলেন, এ সময় ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে রীমা আক্তারকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির প্রায় এক ঘণ্টা পর রীমা মারা যান।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, রীমার কক্ষে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না। আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে, সেগুলো শোধ করে দিয়ো।’

রীমার চাচা নাছির উদ্দীন বলেন, গত রমজানে ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদের সঙ্গে তাঁর ভাতিজা রীমার বিয়ের কাবিন হয়। গত রোববার বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়। বিয়েতে ৫০০ বরযাত্রী আসার কথা। কিন্তু হঠাৎ বরপক্ষ বলে, মাত্র ১০ জন এসে কনেকে নিয়ে যাবেন, তাদের যাতে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপর তাদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হলেও তারা আবার আসবাব দাবি করে। আসবাব দেওয়ার বিষয়ে দুই-এক দিন সময় চাওয়া হয়। কিন্তু আসবাব দেরিতে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মোরশেদ রীমাকে গালিগালাজ করেন। এ কারণে রীমা আত্মহত্যা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মোরশেদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে মোরশেদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে ওই আত্মীয় কিছুক্ষণ পর জানান, মোরশেদ বিমর্ষ হয়ে ভেঙে পড়েছেন। তিনি কথা বলতে পারবেন না।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত তরুণীর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় চিরকুটের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। চিরকুটটির বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।