একসঙ্গে ৫ বন্ধুর মৃত্যু, এলাকায় শোকের মাতম

প্রকাশিত:শুক্রবার, ০৫ জুলা ২০২৪ ০১:০৭

একসঙ্গে ৫ বন্ধুর মৃত্যু, এলাকায় শোকের মাতম

শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদী হাইওয়ে থানা থেকে পরিবারের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এরপর বিকেল ৩টার দিকে আজমপুর গ্রামের ডিগ্রিপাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে একসঙ্গে চারজনের দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলার ভারইমারি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিজয় হোসেন (১৯), আজমপুর গ্রামের মাসুম হোসেনের ছেলে শিশির ইসলাম (১৮), ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাওন হোসেন (১৮), রেজাউল করিমের ছেলে জিহাদ হোসেন (১৭), আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিজয় হোসেন (১৯) ও ইলিয়াস হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন সিফাত (১৮)। নিহতদের মধ্যে চালক বিজয় হোসেন ঢাকায় গাড়ি চালান। বাকি চারজন ঈশ্বরদী টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তিনজন নবম শ্রেণিতে পড়ত। আর একজন দশম শ্রেণির ছাত্র।

সকালে আজমপুর গ্রামে দেখা যায়, মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন স্বজন ও গ্রামবাসীরা। পুরো গ্রাম নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে। মরদেহ একনজর দেখতে বাড়িতে বাড়িতে হাজারো মানুষের ভিড় করেছে।

নিহত সিফাতের দাদা সোলাইমান প্রামাণিক বলেন, সিফাতের বাবা ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এরপর ওর মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সে আমার বাড়িতে বড় হয়েছে। ছেলের পর নাতির এমন মৃত্যুতে কষ্ট বেশি হচ্ছে। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ যেন ওকে সুখে রাখে।

আজমপুর গ্রামের সোহরাব আলী বলেন, একই গ্রামের চারজনের একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তাদেরকে একই জায়গায় দাফন করা হলো। নিহত পাঁচজনই বন্ধু ছিল। এদের চারজনের বাড়ি পাশাপাশি। এমন মৃত্যুতে গ্রামের মানুষ নির্বাক। পুরো গ্রামে শোকের মাতম চলছে।

একই গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, এর আগে আমাদের অঞ্চলে একসঙ্গে চারজন মানুষ মারা যায়নি। এজন্য এ ঘটনায় আমরা খুবই হতবাক হয়েছি। সবাইকে ডিগ্রিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হলো।

নিহত জিহাদের বাবা রেজাউল ইসলাম বলেন, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেলে বাড়িতেই ছিল। রাত ৮টার দিকে বন্ধুরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাদের মৃত্যুর খবর শুনতে পাই। দুর্ঘটাস্থলে গিয়ে ছেলের মরদেহ দেখতে পাই। চোখের সামনে ছেলের মরদেহ দেখতে পাওয়া বড়ই হতভাগা কপাল।

জিহাদের মা চুমকি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শ্রমিকের কাজ করে ছেলেকে ভোকেশনালে পড়াশোনা করাই। কত কষ্ট করে তাকে মানুষ করতেছি। গতকাল সকালেও আমি তাকে ৫০ টাকা দিছি। আমার ছেলে খুবই মেধাবী ছিল। আজকে আমাকে এতিম বানিয়ে চলে গেল। আমি কীভাবে এটা সহ্য করব?

ঈশ্বরদী শহর থেকে এসেছেন মুহা. আজমল হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, সকাল ঘুম থেকে উঠে শুনি আমাদের ঈশ্বরদীর পাঁচজন তরুণ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। নিহতদের বাড়িতে একটু সান্ত্বনা দিতে আসছি। আসলে এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে আজমপুর গ্রামের চারজনকে ডিগ্রিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুতে ইউনিয়নজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ঘটনা জানতে পেরে সকালে নিহতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা খুবই দু:খজনক। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

ঈশ্বরদীর পাকশী হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, নিহতদের মরদেহ দুপুর ১২টার দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের দাশুড়িয়া সুগার মিলের সামনে একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ