বাজারে নৈরাজ্য চলছে জানে সবাই, এলপি গ্যাসের ভূত তাহলে তাড়াবে কে?

প্রকাশিত:শনিবার, ০৬ জুলা ২০২৪ ১২:০৭

বাজারে নৈরাজ্য চলছে জানে সবাই, এলপি গ্যাসের ভূত তাহলে তাড়াবে কে?

অর্থনীতি ডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। অথচ সর্বশেষ গত ২ জুলাই ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩৬৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। এতে বাড়তি ৩৪-৫৪ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

যার চাহিদা বেশি তার দামও বেশি

গ্রাহকপর্যায়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানি এলপি গ্যাস বাজারজাত করে। এর মধ্যে বসুন্ধরা, যমুনা, ওমেরা, আইগ্যাস অন্যতম। এর মধ্যে বসুন্ধরা এলপিজির দাম সবচেয়ে বেশি। বসুন্ধরার ১২ কেজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৪২০ টাকায়। এছাড়া ওমেরা ১ হাজার ৩৯০ টাকা, আইগ্যাস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৭০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। যার চাহিদা বেশি, তার দামও বেশি।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, বাজারে বসুন্ধরা সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি।

সরকারি দামে কে বিক্রি হচ্ছে না এমন প্রশ্নে এই ব্যবসায়ী বলেন, বাড়তি দামটা ডিলার পয়েন্ট থেকেই আসে। এখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি থাকলে সেটা স্বল্পমুল্যে কেনার সুযোগ আমাদের নেই। ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।

ক্রেতাদের অসন্তোষ

প্রতিদিনের রান্নার কাজে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটি ন্যায্য দামে কিনতে না পারায় গ্রাহকদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কী বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? এলপি গ্যাসের বাজার থেকে ভূত তাড়াবে কে?

ধানমন্ডির এক বাসিন্দা আকরাম চৌধুরী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, প্রতি মাসে দাম সমন্বয় হয় কিন্তু কোনোবারই সরকারি দামে এলপিজি কেনা যাচ্ছে না। ১৩০০ টাকার গ্যাস কিনতে হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। তাহলে মূল্য নির্ধারণ করে কী লাভ?

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. মিজান বলেন, সবকিছুর দামই তো এখন বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলও বেড়েছে। লাইনের গ্যাসে পাশাপাশি সিলিন্ডারও কিনতে হয় কিন্তু সেই সিলিন্ডারটাও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে!

দাম নিয়ে নৈরাজ্য কেন?

২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনেই আপত্তি জানায় লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। এরপর থেকে বিইআরসির সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয় লোয়াবের। তারা প্রতিমাসের দর ঘোষণা বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির উপর চাপ তৈরি করে।

প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণার সময় বলা হয়, যেহেতু পণ্যটি প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানির উপর নির্ভরশীল। সে কারণে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে। সৌদির দর উঠা-নামা করলে এলপিজির মূল্য উঠানামা করবে। আমদানিকারকের অন্যান্য কমিশন ও খরচ অপরিবর্তিত থাকবে। কমিশনের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি মাসে দর ঘোষণা হয়ে আসছে।

বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব স্ট্র্যাটেজি জাকারিয়া জালাল বলেন, এলপিজি আমদানিতে প্রতি মাসে এলসি খুলতে হয়। বর্তমান ডলার সংকটে এলসি খোলার ধারাবাহিকতায় বিঘ্নতা ঘটছে। এর ফলে সাপ্লাই চেইনের যে গ্যাপ তৈরি হয়, তার সুযোগ নিয়ে থাকেন ডিলাররা। সাপ্লাই কমে গেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। তবে আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি সঠিক মূল্যে ক্রেতাদের কাছে পণ্যটি বিক্রি করার।

এলপি গ্যাস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. হামিদ লতিফ ভুঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিইআরসি যে দাম নির্ধারণ করে, সেটা শুধু পণ্যের দাম। এর বাইরে কিন্তু আমাদের বিবিধ খরচ থাকে। কোম্পানি থেকে সিলিন্ডার কেনার পর এরসঙ্গে গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচসহ নানা কিছু যোগ হয়। ফলে চাইলেও সরকারি রেটে বিক্রি করা যায় না।

কি বলছে বিইআরসি?

ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দামে যে ভারসাম্যহীনতা তা নিয়ে অবগত আছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। বাজারে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনতে বিইআরসি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব (প্রশাসন ও আইন) ব্যারিস্টার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিক্রেতারা বলছেন তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অথচ আমরা এলপি গ্যাসের অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করে মূল্যটা নির্ধারণ করি। তাদের বলা হয়েছে যেন সঠিক মূল্যে গ্যাস বিক্রি করেন। তবে এ নিয়ে আমরা কাজ করছি, যাতে ন্যায্য মূল্যেই গ্রাহক পণ্যটি কিনতে পারেন।