১১ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে আগস্ট, ২০২৫ ইং
প্রকাশিত:শুক্রবার, ২০ সেপ্টে ২০২৪ ০১:০৯
গাইবান্ধার সদর উপজেলায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সড়ক নির্মাণের দেড় মাসের মাথায় ধসে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ এবং নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ না করার ফলে রাস্তার এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে মেরামতের জন্য দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি আজও।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১ হাজার মিটার এইচবিবি (হেরিং বোন বন্ড) রাস্তা নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলক এন্ড পায়েল ট্রেডার্স।
এর মধ্যে, বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ধানঘড়া (আকন্দপাড়া) আশরাফের দোকান থেকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সদরুলের দোকান পর্যন্ত ৭০০ মিটার রাস্তা এবং খোলাহাটি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে চৌধুরীপাড়া জামে মসজিদ থেকে শহিদুল হক সরকারের বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তবে প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলক এন্ড পায়েল ট্রেডার্স কাজটি না করে এসএম এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার শুক্কুর আলীর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করায়।
সরেজমিনে দক্ষিণ ধানঘরা গ্রামের ৭০০ মিটার অংশে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ইট ধসে পড়েছে এবং অনেক স্থানে গভীর ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে পুকুরের পাশে থাকা রাস্তার সাইড ওয়াল ভেঙে গেছে এবং রাস্তার প্রায় ১০০ ফিট জায়গা মাঝখানে উঁচু হয়ে দুই সাইড দেবে গেছে। কিছু স্থানে মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া, ইট বিছানোর পর ঠিকভাবে বালু দেওয়া হয়নি, ফলে বেশিরভাগ জায়গায় ইটগুলো এখনো নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তার কাজ অত্যন্ত দায়সারাভাবে করা হয়েছে। রাস্তা দুই ফুট খননের পর বালু দিয়ে ভরাট এবং পানি দেওয়ার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে করা হয়নি।
‘এটা কোনো রাস্তা নয়, যেন একটা ফাঁকিবাজির প্রজেক্ট’—এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, নিম্নমানের কাজের জন্য রাস্তার এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, রাস্তার কাজের এই অবস্থা হওয়ার পর পরই মেরামতের জন্য পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদকে কয়েকবার জানানো হয়। তিনি ঠিকাদারসহ রাস্তাটি পরিদর্শন করে মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেরামত তো দূরের কথা খোঁজ নিতেও আসেননি।
দক্ষিণ ধানঘড়া আকন্দ পাড়া গ্রামের নুর আহমেদ নয়ন বলেন, ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করেছে। যার কারণে কাজের সঠিক মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অল্পদিনেই রাস্তার যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দ্রুত তা মেরামত না করলে বৃহৎ আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একই গ্রামের বকুল আকন্দ বলেন, এই রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে গেলে তা কেঁপে ওঠে। রাস্তা নির্মাণের পর ঠিকমতো বালু না দেওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। তা ছাড়া আমার বাড়ির সামনেও রাস্তার কিছু অংশ দেবে গেছে। এত টাকার কাজেও যদি রাস্তা ঠিকমতো না হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই।
শাওন নামে আরেক যুবক জানান, এই রাস্তায় বালু ফেলার পর পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নামমাত্র রোলার দিয়ে সমান করা হয়েছে। এ কারণে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তাটি উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। দ্রুত রাস্তাটি মেরামত করা দরকার।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে একাধিকবার কল করলেও ফোন রিসিভ করেননি সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। তবে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন,
এ রাস্তার অভিযোগের বিষয়ে আমি জানি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাটি পরিদর্শন করে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ আল হাসান জানান, রাস্তার এমন দুরবস্থার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১