অনুসন্ধানে দুদক সম্পদে মজেছেন পুলিশের ডিআইজি জামিল

প্রকাশিত:রবিবার, ০৬ অক্টো ২০২৪ ০৩:১০

অনুসন্ধানে দুদক সম্পদে মজেছেন পুলিশের ডিআইজি জামিল

পুলিশের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) জামিল হাসান। বরিশাল রেঞ্জে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। নিজ এলাকা বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় ভূস্বামী হিসাবে পরিচয় পাওয়া পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।

জানা গেছে, ৪০ একর জমিতে রিসোর্ট করার পাশাপাশি জামিল হাসান পৈতৃক বাড়িটি নতুন করে গড়েছেন ৩০ বিঘা জমির ওপর। অন্তত ৩৬ বিঘা জমির ওপর আছে গরুর খামার। রাজধানী ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক তিনি।

সম্পদ অর্জনের নেশায় মজে যাওয়া পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরিশাল থেকে হাইওয়ে ‍পুলিশে বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, অঢেল সম্পদ অর্জনের গোয়েন্দা প্রমাণ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, কমিশনের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের পর আইন ও বিধি অনুসরণ করে অনুসন্ধান কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে দুদক। অনুসন্ধান শেষ হওয়ার পর ‍প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি।

ডিআইজি জামিল হাসানের যত সম্পদ

বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ২০তম ব্যাচে এএসপি হিসেবে জামিল হাসান যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন কর্মস্থলে কাজ করছেন। এর মধ্যে ফরিদপুরে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে দাপটের সঙ্গে চাকরি করে বেশ আলোচিত হয়েছেন।

২০২১ সালে তিনি র‍্যাব-৮ এর (বরিশাল) কমান্ডিং অফিসার হিসেবে চাকরি করার সময় গোপালগঞ্জে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের জমি কেনাতে তদারকিও করেছেন তিনি। সেই থেকে তার সহযোগী হিসাবে পরিচিতি পান জামিল।

বেনজীরের জমি তদারকি করতে করতে সম্পদের নেশায় মেতে ওঠেন জামিল। নিজ উপজেলা উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের একটি মাঠই কিনেন জামিল হাসান।

সেখানে তিনি একটি রিসোর্ট বানানোর কার্যক্রম শুরু করেন। অন্তত ৪০ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘার মতো জমি ক্রয় করে ভরাট করে রিসোর্ট বানানোর উদ্যোগ নেন।

ওই জমিতেই টিনশেড করে মুরগির খামার গড়েছেন। এভাবে চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে, নিজ বাড়ি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের হাবিবপুর গ্রামে অন্তত ৮ থেকে ১০ একর অর্থাৎ ২৪ থেকে ৩০ বিঘার ওপর রিসোর্টের আদলে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন জামিল হাসান। হাবিবপুর গ্রামেই বিপুল জায়গায় গড়ে তুলেছেন বিশাল গরুর খামার। মূল সড়কের পাশেই অন্তত ১০ থেকে ১২ একর জমিতে গরুর হাট বসিয়েছেন।

ঢাকায় ফ্ল্যাট

রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁওয়ে তার রয়েছে দুটি আলিশান ফ্ল্যাট। আছে বিলাসবহুল ৪টি গাড়ি। খিলগাঁও আবাসিক এলাকার খিলগাঁও প্রধান সড়কে সি-৫৯৭ নম্বর কপোতাক্ষ ফজল গার্ডেন নামের বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের সাততলার বিলাসবহুল এই ফ্ল্যাটটি বছর ছয়েক আগে কেনা বলে জানা গেছে।

রামপুরা থানার পূর্ব রামপুরার বনশ্রী আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর রোডে ৩০ কাঠা জমির ওপর ১৬তলা একটি ভবনে রয়েছে মোট ১২৮টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাট ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট।

ভবনটির নাম পুলিশ পার্ক। ওই ভবনেও জামিল হাসানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটটির দাম ৩ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

এসব বিষয় জানতে ডিআইজি জামিল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হরেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সম্পদের বিষয়ে গণমাধ্যমে ডিআইজি জামিল হাসান বলেন, ‘হাবিবপুরে বাড়িটি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া।

জমির পরিমাণ ১০ একরের বেশি। বাড়িতে যা কিছু করা হয়েছে, সেগুলো আমাদের বাড়ির সম্পদ দিয়েই। ঢাকায় আমার একটি ফ্ল্যাট ছাড়া নিজের কোনো সম্পদ নেই’।