১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
প্রকাশিত:বুধবার, ১৬ অক্টো ২০২৪ ০২:১০
২০০৮ নির্বাচন থেকে বাফুফের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। টানা চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই আমলাকে নিয়ে এবার ফুটবলাঙ্গনে খানিকটা আপত্তি ছিল। এরপরও বাফুফের নির্বাহী কমিটি মেজবাহ উদ্দিনের ওপরই আস্থা রেখেছে। আসন্ন নির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ের দিন একাধিক পদে মনোনয়ন দাখিল করা প্রার্থীদের একটি পদ বেছে নিতে বলায় নতুন বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
বাফুফে নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থী একাধিক পদে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন। তাদের মধ্যে শুধু সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইকবাল হোসেন (সহ-সভাপতি ও সদস্য) ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাব এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউন্সিলর শাহাদাত হোসেন জুবায়ের দুই (সভাপতি ও সদস্য) পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এই দু’জনকে একটি পদে নির্বাচন করার জন্য নির্দেশনা প্রেরণ করে নির্বাচন কমিশন। শাহাদাত জুবায়ের দুপুরের আগেই সভাপতি পদ থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন করে সদস্য নির্বাচন করার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানান।
অন্যদিকে, ইকবাল দুপুরে সশরীরে ভবনে এসে নির্বাচন কমিশনে দুই পদে মনোনয়ন বৈধতার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করলেও শেষ পর্যন্ত সহ-সভাপতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। শাহাদাত জুবায়ের সভাপতি পদে নির্বাচন না করায় এখন তাবিথের আউয়ালের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী থাকছেন দিনাজপুর তৃণমূলের সংগঠক মিজানুর রহমান চৌধুরি। সভাপতি পদে বিজয়ী হওয়া তাবিথের জন্য এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ইকবাল সরে যাওয়ায় এখন চার সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬ জনে (শাহরিয়ার জাহেদী, ফাহাদ করিম, ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি, সাব্বির আরেফ, শফিকুল ইসলাম মানিক ও সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির)।
আজ (বুধবার) বিকেলে বাফুফে ভবনে ঘণ্টা দুয়েক যাচাই-বাছাই শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘৫২টি পদে মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে দুইজন প্রত্যাহার করেছে। বৈধ রয়েছে বাকি ৫০টি মনোনয়ন। এই মনোনয়নের ওপর আপত্তি থাকলে কাল (বৃহস্পতিবার) দাখিল করতে পারবে, এর পরদিন শুনানি। শনিবার আমরা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রারম্ভিক মন্তব্যেই তথ্যগত বিভ্রাট রয়েছে। ১৯ অক্টোবর শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন। ২০ অক্টোবর রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম। রোববার প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বক্তব্যে ‘প্রত্যাহার’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। প্রত্যাহারের জন্য ১৯-২০ অক্টোবর সুনির্দিষ্ট সময় রয়েছে, এর আগে প্রত্যাহার কেন এই প্রশ্নে তার জবাব, ‘আজ মূলত প্রত্যাহার হয়নি। যারা একাধিক পদে মনোনয়ন দাখিল করেছিল, দু’টির মধ্যে একটি পদ নির্বাচন করেছে।’
ক্রীড়াঙ্গনে অন্য সকল ফেডারেশনের (ক্রিকেট বোর্ডে প্রথম স্তরের নির্বাচনে সবাই পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে) নির্বাচনে অনেক প্রার্থী একাধিক পদে মনোনয়ন ক্রয় এবং দাখিল করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় একাধিক পদেই একই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে। প্রত্যাহারের সময় প্রার্থীরা সুনির্দিষ্ট একটি পদেই প্রার্থীতা ধরে রাখে। ২০১৬ সালে বাফুফেতে মেজবাহ উদ্দিনের নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল প্রত্যাহারের দিন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদস্য দুই পদ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার যাচাই-বাছাইয়ের সময় এক পদে কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশ থেকে নির্বাচন কমিশনার এহসানুর রহমান বলেন, ‘বাফুফের নির্বাচন বিধিমালায় ৬ এর ৩ ধারায় একটি পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বলা হয়েছে।’
যাচাই-বাছাইয়ে একাধিক পদে বৈধ হওয়ার পর প্রত্যাহারের সময় একাধিক পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিলেই এক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ থাকছে। সেই যুক্তির পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, ‘এক পদেই যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিধান থাকে তাহলে একাধিক পদে মনোনয়ন বিক্রি কেন এবং মনোনয়ন গ্রহণ কেন?’ এর বিপরীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উত্তর, ‘একজন দশটিও কিনতে ও জমা দিতে পারে। বৈধ হবে একটিই।’
প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরবার শরীয়তপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক চঞ্চল সদস্য প্রার্থী মাহফুজা আক্তার কিরণের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের ভিত্তি ছিল– জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে মাহফুজা আক্তার আর মনোনয়নপত্রে রয়েছে মাহফুজা আক্তার কিরণ। নামের এই বৈসাদৃশ্যের আবেদন নির্বাচন কমিশন আমলে নিয়েও খারিজ করে দিয়েছে, ‘শরীয়তপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন থেকে একজন প্রার্থীর ব্যাপারে আবেদন ছিল। সেই আবেদনটি পর্যালোচনা করে বিগত রীতি অনুসারে মনোনয়ন বৈধ করে আবেদন খারিজ করা হয়েছে।’
আবেদনকারী নির্বাচন কমিশনের বিচারে সন্তুষ্ট হননি। আগামীকাল ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে নির্বাচনের আপিল কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। আপিল কমিশনের কাছে অভিযোগ আসলে শুক্রবার দিনব্যাপি সেগুলোর শুনানি চলবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম. দেলোয়ার হোসেন
অফিস: অফিস: রোম নং-৫, নীচতলা, ১৭-১৮, বাইন কোর্ট, হোয়াইটচ্যাপল, লন্ডন।
মোবাইল: ০৭৩৭৭-৯৫১৬৮১